জ্বালানি ও সিমেন্ট খাতে স্বস্তি, তবু লক্ষণ নেই দাম কমার

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিবারক স্প্রে করছেন একজন কর্মী। গতকাল ইরাকের উত্তর বসরার নাহর বিন উমর অয়েল ফিল্ড নামের তেলক্ষেত্রে। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিবারক স্প্রে করছেন একজন কর্মী। গতকাল ইরাকের উত্তর বসরার নাহর বিন উমর অয়েল ফিল্ড নামের তেলক্ষেত্রে। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশ্ববাণিজ্য ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কাও বাড়ছে দিন দিন। উদ্বেগে আছে বাংলাদেশও। তবে করোনা স্বস্তিতে রেখেছে জ্বালানি তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও সিমেন্ট খাতের ব্যবসায়ীদের। কারণ, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি (১৫৯ লিটার) দাম গত ৯ মার্চ এক দিনেই ৩০ শতাংশ কমে ৩০ ডলারের কাছাকাছি নেমেছে। দামটি এখনো ৩৫ ডলারের মধ্যেই আছে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকারের দামও কমেছে।

বিপিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মুহূর্তে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি একাধিক সিমেন্ট কোম্পানির মালিক প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের সিমেন্টের উৎপাদন ও ব্যবহার বেড়েছে। ফলে আপাতত এ দুই খাতের ব্যবসায়ীরা স্বস্তিতে রয়েছেন। তবে ভোক্তা পর্যায়ে এখনো তেল ও সিমেন্টের দাম কমানোর কোনো লক্ষণ নেই।

বিপিসি সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে দাম কম থাকায় ইতিমধ্যে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি মজুত করা হয়েছে। আরও আমদানির জন্য নতুন ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া আগের ঋণপত্র অনুযায়ী ২০ মার্চের মধ্যে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আসার কথা। একইভাবে সিমেন্ট কারখানার মালিকেরাও কম দামে ক্লিংকার আমদানিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। 

>বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকারের দাম কমেছে
কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে এখনো তেল ও সিমেন্টের দাম কমানোর লক্ষণ নেই

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সম্প্রতি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমলেও দেশে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের দাম বেড়ে চলছে। আমার ধারণা, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের আরও কয়েক মাস নিম্নমুখীই থাকবে। ফলে সরকারের উচিত অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যটির দাম কমিয়ে ভোক্তাদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়া।’ 

গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, সাধারণত বিশ্ববাজারে ক্লিংকারের দাম বাড়লে দেশে সিমেন্টের দাম বাড়ে। কিন্তু দাম কমলে এর সুবিধা ভোক্তারা পান না।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাজারে সর্বশেষ জ্বালানির দাম কমেছিল ২০১৬ সালের এপ্রিলে। দাম কমানোর পরও বিপিসির মুনাফা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংস্থাটির মুনাফা হয় ২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। 

করোনার ধাক্কায় ৯ মার্চ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে সাড়ে ২৯ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। এর আগে ১৯৯০ সালে ইরাক ও কুয়েত যুদ্ধের সময়ে জ্বালানির দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছিল।

জানতে চাইলে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মণিলাল দাশ প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম পড়ে যাওয়ায় এবার বিপিসির রেকর্ড মুনাফা হতে পারে।

সিমেন্ট খাত

বিশ্ববাজারে ক্লিংকারের দাম ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ কমেছে। মাসখানেক আগেও উন্নত মানের ক্লিংকারের দাম ছিল টনপ্রতি ৪৮-৫০ ডলার। চলতি সপ্তাহে তা ৪২ ডলারে নেমে আসে। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল খালেক বলেন, সম্প্রতি সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে সিমেন্টের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম কমায় সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর লোকসান কমবে।

বর্তমানে দেশে ৩৭টি সিমেন্ট কারখানা রয়েছে, যেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৬ কোটি মেট্রিক টন। কিন্তু দেশে সিমেন্টের চাহিদা ৩ কোটি ৩০ লাখ টন। ফলে চাহিদার তুলনায় সিমেন্ট খাতের উৎপাদন ক্ষমতা বেশি।