মন্দা শুরু হয়ে গেছে

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসে প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় লন্ডন থেকে শুরু হয়ে নিউইয়র্ক, প্যারিস—সবখানেই হোটেল, রেস্তোরাঁ, বিমান পরিবহন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বৈশ্বিক মন্দা এখন আর আবছা হুমকি নয়, মন্দা শুরু হয়ে গেছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে চীনের অর্থনীতি সব সূচকেই নিম্নগামী। তারা শিগগিরই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে, তেমন সম্ভাবনাও কম।

ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো করোনা মহামারি ঠেকাতে অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এশিয়া এখনো উচ্চমাত্রার সতর্কতা অবলম্বন করছে। বিশ্বজুড়েই আর্থিক বাজারে ধস নেমেছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকোচন শুরু হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক প্রধান ডেভিড উইলকক্স ‘সিএনএন বিজনেস’কে বলেছেন, ‘১০ দিন আগে যৌক্তিক কারণেই এই অনিশ্চয়তা ছিল যে বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে কি না। ১০ দিন পর এ নিয়ে প্রশ্নই নেই যে পরিস্থিতি সে দিকেই যাচ্ছে।’

গত এক সপ্তাহে পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিদিনই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। অনেক দেশেই প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গণপরিসর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ অর্থনীতির জন্য ব্যাপক অভিঘাত। বিশেষ করে চীনা অর্থনীতির ওপর প্রভাব যখন পরিষ্কার হচ্ছে, তখন সব ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হতে শুরু করেছে।

কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চীনা অর্থনীতির সব খাতেই প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটির খুচরা বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। শিল্পোৎপাদন কমেছে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। স্থাবর সম্পত্তিতে বিনিয়োগ কমেছে ২৫ শতাংশ। দেশটির ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস এই তথ্য দিয়েছে। শিল্পোৎপাদন হ্রাসের হার দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

রোববার মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস মার্কিন প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে। এর পেছনে তারা ব্যয় হ্রাস, সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ও কোয়ারেন্টিনকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছে। তারা মনে করছে, এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত মার্কিন অর্থনীতি ৫ শতাংশ সংকুচিত হবে। যেখানে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে শূন্য শতাংশ। আর পুরো বছরের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ২ শতাংশ।

অন্যদিকে আইএনজির অর্থনীতিবিদেরা রোববার বলেছেন, তাঁরা মনে করছেন, দ্বিতীয় প্রান্তিকে মার্কিন অর্থনীতি ৮ শতাংশ সংকুচিত হবে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর যেমনটা হয়েছিল। মন্দার সংজ্ঞা হলো, পরপর দুই প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পাওয়া। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সেই মন্দা শুরু হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশেই শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। সোমবার ডাও সূচক নেমে যায় ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত তিন দশকে অর্থনীতিতে এমন ধস নজিরবিহীন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই থেকে তিন সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, করোনাভাইরাসের জেরে মন্দার গ্রাসে চলে যেতে পারে অর্থনীতি।