কেনাকাটায় তাড়া, দাম বেড়েছে কিছু পণ্যের

করোনাভাইরাসের আতঙ্কে একসঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে রাখছে মানুষ। যাঁর বাসায় মাসে ২০ কেজি চাল লাগে, দেখা যাচ্ছে তিনি এখন কিনছেন ৫০ কেজির এক বস্তা। বাজারগুলোয় মানুষের ব্যাপক ভিড়। মূলত, ৯ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এই পরিস্থিতি। ওই দিন দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ধরা পড়ে। তবে বাজারে ভিড়টা বেশি দেখা গেছে গতকাল মঙ্গলবার থেকে। আজ বুধবার একই অবস্থা।

ব্যবসায়ীরা বললেন, দাম বেশি বেড়েছে চালের। মানভেদে প্রতি কেজিতে দুই থেকে চার টাকা। খোলা সয়াবিন, পামতেল, ডাল, ডিম ও আলুর দাম কিছুটা বাড়তি। বিদেশি শিশুখাদ্য ও ডায়াপারের দামও বাড়তি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। জীবাণুনাশকের দাম তো আগে থেকেই বেড়ে গেছে।

বাজারে মানুষের চাপ যেহেতু বেশি, সেহেতু দর-কষাকষির সুযোগ কম। ফলে আগে যেটুকু ছাড় পাওয়া যেত, সেটাও এখন পাওয়া যাচ্ছে না।

অবশ্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন যাঁরা বিপুল পরিমাণে কিনে রাখছেন, তাঁদের কয়েক দিন পরই আফসোস করতে হতে পারে। পণ্যের ঘাটতি নেই। তাই কয়েক দিন পর চাপ কমে গেলে দাম কমে যেতে পারে। আর এখন যাঁরা বেশি কিনছেন, তাঁরা এক-দেড় মাসে আর বাজারে আসবেন না। ফলে বাজারে চাহিদা কমবেই।

রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজারের মুদি দোকানি মো. শাহ আলম বলেন, কয়েক দিন ধরে মানুষের ব্যাপক ভিড়। যার লাগবে এক বস্তা, সে কিনছে তিন বস্তা। পরিচিত ক্রেতারা ফোন করলে তাদের কয়েক দিন পরে কেনার পরামর্শ দিচ্ছি। তিনিও জানান, চালের দাম দুই থেকে চার টাকা বেড়েছে। মসুর ডাল তিন-চার টাকা বাড়তি। পেঁয়াজ-রসুনের দাম বেশ কমেছে। এখন পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ টাকা ও চায়না রসুন ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি।

শেওড়াপাড়া বাজারে আজ দেশি নতুন রসুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৩০ টাকা ও ফার্মের ডিম ১০০ টাকা ডজন দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। ডিম বিক্রেতা বলেন, তিন দিন আগে ডিমের ডজন ৯০ টাকা ছিল।

চালের দাম বাড়ল কেন, জানতে চাইলে পুরান ঢাকার বাবুবাজারের চালের আড়তের মালিক কাওসার রহমান বলেন, এখন মৌসুমের শেষ সময়। কিছুদিন পরে নতুন চাল উঠবে। হঠাৎ বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। তিনি জানান, কয়েক দিনে প্রতি কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে।

অন্যদিকে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের বরিশাল রাইস এজেন্সির বিক্রেতা মহিউদ্দিন রাজা বলেন, মিল–মালিকদের অনেকেই নতুন সরবরাহ আদেশ নিচ্ছেন না। এতে বাজারে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

সমস্যা হলো, আতঙ্কের কেনাকাটায় দোকানিরা ক্রেতাদের কাছ থেকে যেকোনো দাম চাইতে পারছেন। এতে একেক জায়গায় পণ্য একেক দামে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে বিদেশি শিশুখাদ্যের দাম অনেকটাই বাড়তি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের দোতলায় এক দোকানমালিক বলেন, মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা একটি ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের ১ হাজার ৮০০ গ্রামের জারের কেনা দর ছিল ২ হাজার ৪০০ টাকা। বিক্রি করতাম ২ হাজার ৬০০ টাকায়। এখন সেটা কিনতেই হচ্ছে ৩ হাজার টাকার বেশি দামে। একইভাবে বিদেশি কয়েকটি ব্র্যান্ডের ডায়াপারের দাম প্যাকেট–প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

কিচেন মার্কেটের দোকানমালিক জাকির হোসেন বলেন, ‘দেশি পণ্যের কোনো অভাব নেই। আর যারা হুজুগে কিনছে, তাদের আমি একটির বেশি দিচ্ছি না।’