মোটা চালের দাম ২৬% বেড়েছে

মিরপুরের শাহ আলী বাগে ছোট একটি মুদিদোকান জলিল ব্যাপারীর। গতকাল শনিবার দুপুরে গিয়ে জানতে চাইলাম, মোটা চালের কেজি কত? জানালেন, ৪০ টাকা। দিন দশেক আগে কত ছিল? বললেন, ৩২ টাকা।

এ হিসাব বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, অল্প কিছুদিনেই মোটা চালের দাম ২৫ শতাংশ বেড়েছে। জলিল ব্যাপারীর একটি দোকানের হিসাব পুরো শহর বা দেশের চিত্র না-ও হতে পারে। তাহলে দেখা যাক সরকারি হিসাব। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, বাজারে এখন মোটা চালের কেজি ৩৮ থেকে ৫০ টাকা। ১০ দিন আগে, অর্থাৎ ১১ মার্চ এ দর ছিল ৩২ থেকে ৩৮ টাকা। গড় হিসাবে দাম বেড়েছে ২৬ শতাংশ।

শুধু মোটা চাল নয়, সব ধরনের চালের দামই ব্যাপক চড়া। ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডিম, আলু, মাছ ও মাংস—সবকিছুতেই মূল্যবৃদ্ধির আঁচ। যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা দাম দেখছেন না, পণ্য কিনে ঘর ভরছেন। বাজারে এই প্রবণতা শুরু হয়েছে ৮ মার্চ থেকে। এদিন দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানায় সরকার। বাজারের এই পরিস্থিতি ব্যাপক মাত্রা পায় ১৭ মার্চ। এদিন দেশে আরও দুজনের করোনা শনাক্ত হয়।

এতে বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষ, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনায় রাজধানীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ায় যাঁদের আয় কমেছে। বিপরীতে অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম বেড়ে গেছে।

কোন কোন পণ্যের দাম বেড়েছে, তার একটা হিসাব দিলেন সাফিয়া বেগম, যিনি চিড়িয়াখানা সড়কের ফুটপাতের বাজার থেকে কেনাকাটা করে ফিরছিলেন। তাঁর হাতে ছিল চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ ও ডিম। বললেন, তিনি যা কিনেছেন, সবকিছুর দামই বাড়তি। এক কেজি চাল কিনেছেন ৪০ টাকায়, বেড়েছে ৮ টাকা। ২৫০ গ্রাম ডাল কিনেছেন ১৮ টাকা দিয়ে, বাড়তি ২ টাকা। আধা কেজি আলু কিনেছেন ১৩ টাকায়, বাড়তি ৩ টাকা। ২৫০ গ্রাম পেঁয়াজ কিনেছেন ১৫ টাকায়, বাড়তি ৫ টাকা। দুটো ডিম কিনেছেন ২০ টাকায়, বাড়তি ৪ টাকা।

সব মিলিয়ে সাফিয়া বেগমের এক দিনের বাজারে ব্যয় বেড়েছে ২২ টাকা। ১০ দিন আগে তিনি যেসব পণ্য ৮৪ টাকায় কিনতে পারতেন, এখন সেটায় ১০৬ টাকা লাগছে। ব্যয় ২৬ শতাংশ বেশি। তিনি বললেন, রিকশাচালক স্বামীর দৈনিক আয় কমে অর্ধেকে নেমেছে।

টিসিবির হিসাবেই গত এক সপ্তাহে বাজারে ১০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এ তালিকায় যোগ হবে গরুর মাংস ও মাছের দাম।

চালের পাশাপাশি মোটা, মাঝারি ও সরু দানার মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৫ টাকা, পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা, রসুন ৫০ টাকা, আদা ৩০ টাকা, ডিম ডজনে (১২টি) ২৫ টাকা, আলু কেজিতে ৬ থেকে ৮ টাকা, গরুর মাংস ৩০ টাকা ও ছোলা ৫ টাকা বাড়তি।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত বুধবার মানুষকে একসঙ্গে অনেক বেশি পণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যথেষ্ট মজুত আছে। যদিও মানুষ তাতে খুব একটা কান দেয়নি।

চালের দুটি পাইকারি বাজার ঘুরে এবং আরও দুটিতে খোঁজ নিয়ে গতকাল দেখা যায়, মোটা ও সরু চালের সরবরাহ খুবই কম। পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, মিলমালিকেরা চাল সরবরাহ করছেন কম। দাম বেশি চাইছেন।

বাজারে সরু চালের মধ্যে মূল্যনির্দেশক বা ‘বেঞ্চমার্ক’ হলো মিনিকেট। সুপরিচিত ব্র্যান্ডের যে সরু মিনিকেট চালের কেজি এত দিন ৫২ থেকে ৫৩ টাকা ছিল, সেটা এখন ৫৮ টাকার আশপাশে। আর সাধারণ মিনিকেট চাল ৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। মাঝারি বিভিন্ন চালের দামও কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে।

মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের রাজীব রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক আলী আহম্মদ বলেন, কিছু মিল বলছে তাদের কাছে চাল নেই।

পাইকারি বাজারটির অন্তত ১০টি দোকানের কোথাও মোটা চাল দেখা গেল না। একই চিত্র দেখা গেল কারওয়ান বাজারে। ব্যবসায়ীরা এ-ও জানান, চালের সরবরাহে টান পড়ায় খুচরা বিক্রেতাদের কেউ কেউ ইচ্ছেমতো দাম হাঁকিয়েছেন।

কারওয়ান বাজারে এক চাল ব্যবসায়ী বললেন, আগামী মাস, অর্থাৎ বৈশাখে নতুন বোরো মৌসুমের চাল বাজারে আসবে। এ ছাড়াক্রেতাদের চাপ কমলে দাম স্থিতিশীল হতে পারে।