ওয়ালটন দেশের খুব ভালো বিজনেস মডেল

লঙ্কাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার এম এ ফয়সাল মাহমুদ।
লঙ্কাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার এম এ ফয়সাল মাহমুদ।

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মতে, ওয়ালটনের ধারাবাহিক ও টেকসই প্রবৃদ্ধি, ব্যবসা উন্নয়ন, ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ও সার্বিক আর্থিক প্রতিবেদন সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করেই যৌক্তিক দর বিডিং করা হয়েছে।

কোম্পানিটির আইপিও বিডিংয়ে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান জানায়, তারা ওয়ালটনের বিজনেস মডেল কতটুকু শক্তিশালী, অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসায়িক দিক থেকে ওয়ালটন টিকতে পারবে কি-না, দীর্ঘ মেয়াদে তাদের নিট ও গ্রস প্রফিট মার্জিন কেমন রয়েছে, টেকসই গ্রোথ বা টার্নওভার, প্রফিটিবিলিটির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে কি-না এবং কোম্পানিটির অডিট-অ্যাকাউন্টসের স্বচ্ছতা ও কোয়ালিটি ইত্যাদি বিষয়গুলো সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করেই ওয়ালটন শেয়ারের বিডিং করেছেন।

ওয়ালটনের বিডিংয়ে প্রতি শেয়ারের জন্য ৪৪৯ টাকা বিডিং করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান লঙ্কাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। ওই বিডিং দর প্রসঙ্গে কোম্পানিটির চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার এম এ ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ওয়ালটনের প্রসপেক্টাস ও আর্থিক প্রতিবেদন পুরোটা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করেই শেয়ারের বিডিং করেছি। দেশীয় অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ওয়ালটন হিস্ট্রিক্যালি রেটে গ্রো-আপ হয়েছে। যেহেতু কোম্পানিটি বিভিন্ন পণ্য দেশেই উৎপাদন করছে, সেদিক বিবেচনায় তারা ভালো অবস্থানে রয়েছে। আর গত কয়েক বছরে কোম্পানিটির পণ্য রপ্তানি সার্বিক অবস্থাও ভালো।

আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক  মো. মনিরুজ্জামান।
আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান।

এম এ ফয়সাল মাহমুদ জানান, সার্বিকভাবে কোম্পানিটির প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতা, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা আমাদের কাছে ভালো মনে হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানিটির ফ্রি-ফ্লোট শেয়ারের পরিমাণ তুলনামূলক কম রয়েছে। ফলে আশা করা যায় কোম্পানিটির শেয়ারের চাহিদা থাকবে। এসব বিবেচনা করেই ওয়ালটনের প্রতি শেয়ারের জন্য লঙ্কাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ৪৪৯ টাকা বিডিং করেছে, যা কি না যৌক্তিক দর বলেই মনে করছি।

এদিকে বিডিংয়ে ওয়ালটনের প্রতি শেয়ারের জন্য ৪১১ টাকা বিডিং করেছে পুঁজিবাজারের আরেকটি অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্স। ওই বিডিং প্রাইস প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিডিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা ওয়ালটনের বিজনেস মডেল কতটুকু শক্তিশালী তা দেখেছি। বিশেষ করে অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসায়িক দিক থেকে ওয়ালটন টিকতে পারবে কি-না এবং দীর্ঘ মেয়াদে তাদের নেট ও গ্রস প্রফিট মার্জিন কেমন হবে তা বিবেচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানিটির টেকসই গ্রোথ বা টার্নওভার ও প্রফিটিবিলিটির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে কি-না সেটাও দেখা হয়েছে। একই সঙ্গে আমরা কোম্পানিটির অডিট ও অ্যাকাউন্টসের কোয়ালিটিও দেখেছি। এসব কিছু বিবেচনায় এনে আইডিএলসি ফাইন্যান্স ওয়ালটনের জন্য ৪১১ টাকা বিডিং করেছে, যা যৌক্তিক বলে আমি মনে করি।

মো. মনিরুজ্জামান আরো বলেন, ওয়ালটন দেশের খুব ভালো বিজনেস মডেল। এটা সবাই দেখছে এবং যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে। স্থানীয় বাজারে কোম্পানিটির উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। শুধু তাই নয়, তাদের আন্তর্জাতিক বাজারও সম্প্রসারিত হচ্ছে। সেদিক বিবেচনায় কোম্পানিটির ভবিষ্যৎও ভালো বলা যায়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দেশীয় ইলেক্ট্রোনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির অভাব কিছুটা পূরণ হবে। এতে পুঁজিবাজারে গতি ফিরে আসবে এবং গভীরতা বাড়বে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে।

এদিকে ওয়ালটন আইপিওকে ঘিরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের মাধ্যমে বাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ। ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের খরচ মেটাতে ওই টাকা ব্যয় করা হবে। ইতিমধ্যে ওয়ালটনের আর্থিক প্রতিবেদনের নিরিখে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের বিডিংয়ে কোম্পানিটির কাটঅফ প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে ৩১৫ টাকা।