গৃহবন্দী মানুষের জন্য বাজার

কর্মহীন রিকশাওয়ালাদের যুক্ত করে ঘরে ঘরে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে চালডাল ডটকম
কর্মহীন রিকশাওয়ালাদের যুক্ত করে ঘরে ঘরে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে চালডাল ডটকম

করোনাভাইরাসের কারণে কমে এসেছে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল, থেমে গেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এর মধ্যেও তৈরি হচ্ছে নতুন ব্যবসার সম্ভাবনা, তেমনই একটি হচ্ছে কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষকে ঘরে বাজার পৌঁছে দেওয়া।

সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও কাঁচাবাজার খোলা, তা–ও বন্ধ করা হয়েছে অপ্রয়োজনীয় চলাচল। ফলে বাড়িতে বাজার চাওয়ার চাহিদা বেড়ে গেছে বহুগুণে। বাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের উদ্যোগ চালডাল ডটকম জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে তাদের পণ্যের চাহিদা বেড়েছে তিন গুণ। খুব ছোট পরিসরে চলা সুপার শপ মিনা বাজারের অনলাইন সরবরাহ মিনা ক্লিকের অর্ডার বেড়েছে দুই গুণ। ওয়েবসাইটে অর্ডার করে বাজার আনার উদ্যোগ চালডাল ডটকম ব্যবসা করছে সেই ২০১৩ সাল থেকে। তা–ও ঢাকার মানুষকে বাজার বাসায় পৌঁছে দেওয়া বা হোম ডেলিভারির বিষয়টিতে অভ্যস্ত করানো যাচ্ছিল না। এই কাজটাই খুব সহজ হয়ে উঠেছে বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে, এমনটাই জানান চালডালের উদ্যোক্তা জিয়া আশরাফ। তিনি বলেন, ‘যত রকমের ই-কমার্স সাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন—সব ধরনের চেষ্টা করে দিনে আমরা সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার অর্ডার নিশ্চিত করতে পেরেছিলাম। শুধু করোনার কারণে মানুষ গৃহবন্দী হওয়ায় প্রতিদিন অর্ডার আসছে ১০ হাজারেরও বেশি। পরদিন, তার পরদিন করেও যখন সামলানো যাচ্ছে না। আমরা নতুন আরও তিনটি ওয়্যারহাউস খুলেছি। সামলাতে না পেরে বাতিল করছি অনেক অর্ডার।’

একই অবস্থা মিনা ক্লিকের। খুব ছোট করে চলা মিনা বাজারের এই উদ্যোগে হঠাৎ করে অর্ডার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন খান বলেন, ‘এ রকম একটি পরিস্থিতির জন্য আমরা একদম প্রস্তুত ছিলাম না। এখন ডেলিভারি দিয়ে কুলাতে পারছি না।’

গত বছর খুব ভালো ব্যবসা করছে না বলে পাঠাও বন্ধ করে দিয়েছিল তাদের বাজার ডেলিভারি সার্ভিস ‘পাঠাও টং’। পাঠাও-এর প্রতিষ্ঠাতা হুসাইন এম ইলিয়াস বলেন, ‘মানুষ সপ্তাহে মোটে একবার বাজার করে। আমাদের অন্য উদ্যোগের তুলনায় এটা খুব কম ব্যবসা করতে পারছিল।’ এখন যখন গাড়ি চলছে না, পার্সেল যাচ্ছে না, খাবার ডেলিভারি হচ্ছে না, তখন বাজার ডেলিভারিকেই ব্যবসার সুযোগ হিসেবে দেখছেন তিনি।

সহজ ডটকমের আদৌ এমন কোনো ব্যবসা ছিল না। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ২৫ মার্চ থেকে তারা শুরু করেছে বাজার ডেলিভারির ব্যবসা। একদম নতুন হয়েও প্রথম দুই দিনে তারা নয় শর বেশি অর্ডার পেয়েছে। সহজ ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা মালিহা কাদির জানান, এটা প্রতিদিনই বাড়ছে।

নতুন এই ব্যবসার সম্ভাবনাকে খুব ইতিবাচক মনে করছেন জিয়া আশরাফ। তিনি ইতিমধ্যে একটি নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা করছেন ডাক বিভাগের সঙ্গে। করোনা পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, দেশের প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত বাজার সরবরাহের একটি পথ বের করতে চাচ্ছেন তিনি।’

বাড়িতে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার মতো লোকবলের সংকট থাকাকে এই ব্যবসার একমাত্র চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। তবে এ সমস্যারও খুব সুন্দর একটি সমাধানের কথা ভাবছেন জিয়া আশরাফ। তিনি ইতিমধ্যে শহরের কর্মহীন রিকশাওয়ালাদের যুক্ত করেছেন। তাঁর মতে, ‘রিকশাওয়ালারও কাজ পাবেন, আর আমাদেরও সমস্যা মিটবে।’