দেশে দেশে যত পদক্ষেপ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প

শুরুই হয়ে গেছে িবশ্বমন্দা। তবে দ্রুত ফেরাতে হবে পরিস্থিতি—এমন ব্রত নিয়ে কেবল বড় বড় অর্থনীতিই নয়, সব দেশই উঠেপড়ে লেগেছে। নানামুখী পদক্ষেপ, নানা ধরনের প্যাকেজ। এর আগে যুদ্ধ ছাড়া কোনো সংকটে এমনটা আর দেখা যায়নি। প্রকোপ যত বাড়ছে পুনরুদ্ধার প্যাকেজে অর্থের পরিমাণও বাড়াচ্ছেন সরকার প্রধানেরা।

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সহযোগিতা দেবে যুক্তরাষ্ট্র
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি শিগগিরই আমেরিকার সবকিছু আবার সচল করতে চান। প্রেসিডেন্ট জানেন, মৃতের সংখ্যা বাড়বে। তারপরও কর্মচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে চাইছেন তিনি। হোয়াইট হাউস ও সিনেট মিলে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নাগরিক সহযোগিতার সমঝোতা করেছে। ২ লাখ কোটি ডলারের এ নাগরিক সহযোগিতায় ৭৫ হাজার ডলারের নিচে বার্ষিক আয়ের লোকজনকে ১ হাজার ২০০ ডলারের এককালীন চেক দেওয়া হবে। চার মাসের জন্য বেকার ভাতা দেওয়া হবে সব কর্মহীনদের জন্য, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাহায্য করা হবে। বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানেও অর্থের সাহায্য যাবে।

ব্যবসার–বাণিজ্যের দিকে জোর দিল যুক্তরাজ্য
এর আগে নবনিযুক্ত ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় ১ হাজার ৪৫০ কোটি ডলারের জরুরি পুনরুদ্ধার প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে বাঁচাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩৩ হাজার কোটি ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এবার জানালেন, স্বনির্ভর কর্মীরা করোনাভাইরাসের আর্থিক প্রভাব মোকাবিলায় তাঁদের মাসিক গড় মুনাফার ৮০ শতাংশ অনুদান হিসেবে চাইতে পারবেন। এ অর্থের পরিমাণ ২৫০০ পাউন্ডের বেশি হবে না এবং কর্মীরা এককালীন পাবেন এটি। তবে জুনের শুরুতে এটি হাতে পাবেন তাঁরা।

ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক
ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক

১ দশমিক ৭ লাখ কোটি রুপির আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা ভারত সরকারের
আর্থিক অবস্থা পুনরুদ্ধারে অবশ্য একটু দেরিতেই পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকার। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ১ দশমিক ৭ লাখ কোটি রুপির আর্থিক প্যকেজ ঘোষণা করেন। এ আর্থিক সাহায্যের একটি মোটা অংশ করোনায় লকডাউনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ব্যবসায়ী সংস্থাগুলোর হাতে সরাসরি পাঠানো হবে। এ ছাড়া চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসহ জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষের জন্য আগামী তিন মাস মাথাপিছু ৫০ লাখ রুপির বিমা ঘোষণা করা হয়েছে।

চীন যেভাবে আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলা করতে চায়
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রথম শুরু হয় চীনে। এর প্রভাবে দেশটির অর্থনৈতিক ক্ষতি ব্যাপক। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ৩৯ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের অবকাঠামোগত ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে চীন। এ জন্য স্থানীয় সরকারি বন্ডের সহায়তা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ব্যাংকগুলোতে ঋণের বিষয়ে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। পিপলস ব্যাংক অব চায়না ঋণের ওপর সুদের হার কমানোর কথা বলেছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো থেকে রিজার্ভ চাহিদা কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যাতে ব্যাংকগুলো বেশি বেশি ঋণ দিতে পারে।

সুইজারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড যা করছে
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বাঁচাতে ১ হাজার ৫০ কোটি ডলারের আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সুইজারল্যান্ড সরকার। ৭৩০ কোটি ডলারের পুনরুদ্ধার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে নিউজিল্যান্ড সরকার। শ্রমিকদের বেতনে ভর্তুকিসহ বেতনভাতা দিতে এ অর্থ ব্যয় হবে। ভোক্তার ব্যয় ও পর্যটন খাতকে রক্ষায় প্রাথমিকভাবে ইন্দোনেশিয়ার সরকার ৭২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পুনরুদ্ধার প্যাকজ ঘোষণা করে। পরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আরও ৮০ কোটি ডলারের আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ২ হাজার ৭২০ কোটি ডলারের পুনরুদ্ধার প্যাকজ ঘোষণা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। থাই মন্ত্রিসভা ১ হাজার ৭৬০ কোটি ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক প্যাকজের আকার ৯৮০ কোটি ডলারের। মালয়েশিয়ার সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ৬৬০ কোটি ডলারের।

জি–২০ দেশগুলোর যত বিনিয়োগ
বিশ্বের ২০টি বড় অর্থনীতির জোট জি-২০–এর অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানেরা করোনা বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। বিশ্ব অর্থনীতিতে ৫ লাখ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানেরা করোনা মহামারি মোকাবিলায় জি–২০–এর পদক্ষেপ কী হতে পারে, তা নির্ধারণ করতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্মেলন করেন। সৌদি বাদশার সভাপতিত্বে ওই সম্মেলনে তাঁরা ভাইরাসটির বিস্তৃতি রুখতে কার্যকর স্বাস্থ্য স্থাপনা নির্মাণ ও এর জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের বিনিয়োগ করার আশ্বাস দেন। এ সম্মেলনের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, করোনাভাইরাসের সংকট মোকাবিলায় এ ভিডিও সম্মেলন অভূতপূর্ব উদ্দীপনা দেখিয়েছে। এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একে অপরকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার বিষয়েও জোটের সদস্যেরা একমত হয়েছেন।