৯% সুদ কার্যকর, শঙ্কা তারল্য নিয়ে

অলংকরণ : প্রথম আলো
অলংকরণ : প্রথম আলো

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণে ব্যাংকগুলো ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে ঋণ দেওয়া বন্ধ, তাই ব্যাংকগুলো পুরোনো ঋণে নতুন সুদ কার্যকর করছে। এ নিয়ে ব্যাংকগুলো তেমন চাপে নেই।

তবে ব্যাংকগুলো উদ্বিগ্ন তারল্য নিয়ে। করোনাভাইরাসের কারণে আমানত কমে যাচ্ছে। এভাবে চললে ঋণ দেওয়ার মতো তারল্যও ব্যাংকগুলোতে থাকবে না এবং প্রয়োজনীয় ঋণও পাবেন না উৎপাদন খাতের উদ্যোক্তারা। এ জন্য এখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বড় অঙ্কের তহবিল গঠন ও বাজারে টাকা ছাড়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা, তাই সবাই কার্যকর করে ফেলছে। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে সুদ আরও কমাতে হবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বড় অঙ্কের তহবিল গঠন করতে হবে। যাতে ব্যাংকগুলো সেই তহবিল থেকে টাকা নিয়ে এসএমই ও রপ্তানি খাতে ঋণ দিতে পারে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ এপ্রিল থেকে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছিল। নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন ও পুরোনো সব ধরনের ঋণে সুদহার হবে ৯ শতাংশ এবং এরপরও কোনো ঋণ খেলাপি হলে অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদ যুক্ত করা যাবে।

ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে সব ব্যাংক পুরোনো ঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকগুলো এ জন্য তাদের নিজস্ব সুদ হিসাবের সফটওয়্যারও হালনাগাদ করেছে। ব্যাংক খুললেই গ্রাহকদের তা জানিয়ে দেওয়া হবে। আর যদি এপ্রিলে ঋণের কিস্তি বেশি আদায় করা হয়, পরে তা ফেরতও দিয়ে দেবে অনেক ব্যাংক।

 বাংলাদেশ ব্যাংকও জানিয়ে দিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে কেউ কিস্তি দিতে না পারলে ঋণের মানে অবনমন হবে না। অর্থাৎ কিস্তি না দিলে কেউ খেলাপি হয়ে পড়বে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে বর্তমানে ব্যাংকগুলো সীমিত আকারে কার্যক্রম চালু রেখেছে। সারা দেশের ১১ হাজার ব্যাংক শাখার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার শাখায় সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত টাকা জমা ও উত্তোলন করা যাচ্ছে। তবে এ সময় কেউ টাকা জমা করছে না, সবাই টাকা তুলছে। ফলে ব্যাংকগুলো একধরনের তারল্য চাপে পড়েছে। ঋণ আদায়ও স্তিমিত হয়ে আছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, নগদ টাকার ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। এ জন্য ব্যাংক থেকে অনেক টাকা উত্তোলন হচ্ছে, কেউ জমা করছে না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংককে টাকা ছাড়তে হবে। ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা বিল বন্ড কিনে ২৫ হাজার কোটি টাকা বাজারে দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।

আহসান এইচ মনসুর ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলো ৯ শতাংশ সুদ কার্যকর করছে। তবে পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে ঋণ দেওয়ার মতো অর্থ ব্যাংকের থাকবে না। আর ঋণ নেওয়ার মতো ব্যবসায়ী থাকবেন না। এ জন্য বড় কিছু ভাবতে হবে। আমেরিকাসহ অনেক দেশ বাজারে টাকা ছাড়াসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা মনে হয় পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছিল, এসএমই খাতের উৎপাদন শিল্পের ঋণ যাতে কমে না আসে, এ জন্য উৎপাদন শিল্পের ঋণের স্থিতি গত তিন বছরের গড় হারের চেয়ে কোনোভাবেই কম হবে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারে বলে জানা গেছে।