বিশ্বব্যাংকের কাছে আরও অর্থ চায় বাংলাদেশ

সহজ শর্তের ঋণের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের কাছে এবার কঠিন শর্তের বাজেট সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। করোনা বিপর্যয়ে কাটিয়ে অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে দাতা সংস্থাটির কাছ থেকে নতুন করে ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। বর্তমান বাজারদরে টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। আগামী ২০২০–২১ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে এ অর্থ কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ।

এ ছাড়া প্রতিশ্রুত ৭৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার দ্বিতীয় কিস্তির ২৫ কোটি ডলার চলতি ২০১৯–২০ অর্থবছরের বাজেটের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ছাড় করার আবেদন করেছে বাংলাদেশ। ইআরডির দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিশ্বব্যাংকের ফাস্টট্র্যাক সহায়তার আওতায় এ অর্থ চাওয়া হয়েছে।

গত বছর বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৭৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল বাংলাদেশ। গত অর্থবছরে প্রথম কিস্তির ২৫ কোটি ডলার দিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু চলতি অর্থবছরে কোনো অর্থ দেয়নি বাজেট সহায়তা বাবদ। বাজেট সহায়তা পেতে হলে নানা ধরনের শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতা থাকে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে রপ্তানি বহুমুখী করা, শুল্ক আইন পাস, তৈরি পোশাক খাত ছাড়াও অন্য খাতের বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা নিশ্চিত করা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নতুন আইন ও বিধি করা। গত এক বছরে এসব শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। তাই বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ মেলেনি।

বিশ্বব্যাংকসহ দাতারা সাধারণত প্রকল্পভিত্তিক সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে থাকে। আর বাজেটে সহায়তার অর্থ যেকোনো সরকার নিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো খরচ করতে পারে। সাধারত বাজেট সহায়তা দিলে বিশ্বব্যাংক নানা ধরনের শর্ত দিয়ে থাকে।

জানতে চাইলে ইআরডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজেটের চাহিদা মেটাতে বাড়তি অর্থ প্রয়োজন। এ জন্য বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক এখনো আমাদের কিছু জানায়নি।’

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায় কম হবে। সরকার যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তার প্রভাব বাজেটে খুব বেশি পড়বে না। কিন্তু করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অনানুষ্ঠানিক খাতের বিশাল জনগোষ্ঠীকে খাদ্য ও নগদ সহায়তার জন্য বাজেট থেকে অর্থ দিতে হবে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ কম নয়। আমার হিসাবে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত দুস্থ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পেছনে খরচ করতে হবে। তাই সরকারের উচিত শুধু বিশ্বব্যাংক নয়, অন্য উৎসগুলো থেকে অর্থের সংস্থান করা।

৪ এপ্রিল করোনা প্রতিরোধে বাংলাদেশকে ১০ কোটি ডলার বা সাড়ে আট শ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এ অর্থ করোনাভাইরাস চিহ্নিত ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করতে খরচ করা হবে।