গরিবদের হাতে টাকা দিতে নোট ছাপাতে বললেন অভিজিৎ ব্যানার্জি

এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ে মাথা ঘামালে চলবে না, ক্রেডিট রেটিং কমে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়েও নয়, করোনার আঘাতে যেন অর্থনীতি পুরোপুরি অচল হয়ে না যায়, সে জন্য প্রয়োজনে টাকা ছাপিয়ে গরিব মানুষের হিসাবে পাঠানো হোক। এমন কথা নোবলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্থার দুফলো যে নতুন বললেন তা নয়, তবে এই পরিস্থিতিতে নোট ছাপানোর বিশেষ প্রয়োজনীয়তা আছেই বলেই মনে করছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। আনন্দবাজার সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে।

করোনার আগে থেকেই ভারতের অর্থনীতি গতি হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে বসেছিল। এরপর তো শুরু হলো লকডাউন। এর জেরে এখন অধিকাংশ কলকারখানা এবং এমনকি চাষাবাদও বন্ধ। সরবরাহে টান পড়তে শুরু করেছে। আবার কাজ না থাকায় অনেক মানুষের আয়-উপার্জনও কমে গেছে। বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের এখন সামান্য সঞ্চয়েও হাত দিতে হচ্ছে। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংগঠন ফিকি ও আইসিসি আয়োজিত ভিডিও সম্মেলনে অভিজিৎ ব্যানার্জি বলেন, প্রথাগত বা সাবধানী পথে হেঁটে এই পর্বতসমস্যা মোকাবিলা করা কঠিন. . . চাহিদার চাকা সচল রাখতে প্রয়োজনে টাকা ছাপাতে হবে। সেই টাকা গরিব মানুষের হিসাবে সরাসরি পাঠানো জরুরি। এতে মূল্যস্ফীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে, কিন্তু এখন সেটা ভাবার সময় নয়। অভিজিৎ মনে করেন, এই অবস্থায় সেটা না করা হলে অর্থনীতিকে অনেক বড় মাসুল দিতে হতে পারে। এস্থারের মতেও, ‘ভারতে যখন জন-ধন হিসাবের মতো অবকাঠামো আছে, তা কাজে লাগানো জরুরি।’

অর্থনীতির কঠিন সময়ে গরিবদের হাতে টাকা দিতে নোট ছাপানোর প্রসঙ্গ উঠলে অনেক অর্থনীতিবিদ এবং আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠান আপত্তি তোলে। কারণ হিসেবে তারা সব সময় টেক্সট বইয়ের কথাই বলে: মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া হওয়ার আশঙ্কা। আবার সরকারি ব্যয় বাড়ালে রাজস্ব ঘাটতি বৃদ্ধির ভয়ে ক্রেডিট রেটিং কমে (কোনো দেশের ঋণশোধের ক্ষমতার মূল্যায়ন) যাবে, এমন হুঁশিয়ারি দেয় ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থাগুলো। কিন্তু অভিজিতের মতে, অর্থনীতিই যদি ভেঙে পড়ে, তাহলে এ নিয়ে ভেবে লাভ কী? তাঁর কথায়, ‘আগে যেভাবেই হোক অর্থনীতি বাঁচানো জরুরি। অন্য হিসাব তার পরে।’

সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সাবেক গভর্নর রাঘুরাম রাজনও একই কথা বলেছেন। রাজনের মতে, এখন যাঁরা কাজ করতে পারছেন না, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত সেই গরিব ও বেতনভুক নন, এমন নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির পাশে দাঁড়ানো, যাতে তাঁরা এই সময়ে হারিয়ে না যান। এক ব্লগ নোটে রাজন বলছেন, ‘ওই সব দরিদ্র পরিবারকে বেসরকারি উদ্যোগ ও ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের আওতায় আনা উচিত, যাতে তাঁরা পরের কয়েক মাস চালিয়ে নিতে পারেন।’