ভ্যাট রিটার্ন জমার সময় না বাড়ানোয় বিপাকে ব্যবসায়ীরা

এনবিআর
এনবিআর

মাসিক ভ্যাট রিটার্নের সময় বৃদ্ধি না করায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী বুধবারের মধ্যে মার্চের বেচাকেনার হিসাব-নিকাশ করে ভ্যাট রিটার্ন দিতে হবে। এ জন্য আজ রোববার থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত ভ্যাট অফিসগুলো সকাল দশটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা।

তাঁরা বলছেন, সাধারণ ছুটি থাকায় হিসাব–নিকাশ করার কর্মীরা ছুটিতে আছেন। এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় কোনোভাবেই নির্ধারিত সময়ে ভ্যাট রিটার্ন দেওয়া সম্ভব নয়।

করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সারা দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতসহ সব কিছু বন্ধ রয়েছে। এমনকি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাঠপর্যায়ের ভ্যাট কার্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। জরুরি নিত্যপণ্য ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খোলা নেই। ফলে বেচাকেনা নেই বললেই চলে। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে ৯ এপ্রিল জরিমানা ছাড়া ভ্যাট রিটার্ন দেওয়ার নির্ধারিত সময় বৃদ্ধির আবেদন করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এফবিসিসিআইয়ের আবেদনে সাড়া না দিয়ে উল্টো ছুটির দিনে, অর্থাৎ গত শুক্রবার সীমিত পরিসরে খোলা রেখে ভ্যাট রিটার্ন জমা নেওয়ার ঘোষণা দেয় এনবিআর। এনবিআরের নতুন ঘোষণায় বিপাকে পড়ে গেছেন বহু ব্যবসায়ী।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছি, তারা (এনবিআর) যেন তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। লকডাউন পরিস্থিতিতে সবকিছু বন্ধ আছে। ব্যবসায়ী কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। সে ক্ষেত্রে এনবিআর ভ্যাট রিটার্ন থেকে রাজস্বও খুব বেশি পাবে না।’ তাঁর মতে, ভ্যাট রিটার্ন দেওয়ায় কিছু জটিলতাও আছে। অফিস বন্ধ করে দেওয়ায় যাঁরা ভ্যাটের হিসাব-নিকাশ করবেন, তাঁরা বাড়ি চলে গেছেন। এটিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সেখানে নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া আরও কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা নেই। পাইকারি কোনো দোকান খোলা নেই। সব প্রতিষ্ঠান ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে বন্ধ থাকায় কোনো বেচাকেনা নেই। কর্মচারীদের ছুটি দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানমালিকেরা। কর্মচারীদের অনেকেই বাড়ি চলে গেছেন।
সমিতির সাধারন সম্পাদক গোলাম মাওলা প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ বিল, ক্রেডিট কার্ডের বিল সব কিছু পরিশোধ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভ্যাট রিটার্নেও সময়ও পিছিয়ে দেওয়া উচিত। মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীদের অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। এ ছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেচাকেনা নেই, তাহলে ভ্যাটের টাকা দেবেন কীভাবে?

বর্তমানে ১ লাখ ৭৮ হাজার ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে প্রতি মাসে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার প্রতিষ্ঠান রিটার্ন জমা দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের এক-তৃতীয়াংশের মতো অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দেয় বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে। এমন অবস্থায় সামাজিক দুরত্ব রাখার শর্ত মেনে সশরীরে ভ্যাট অফিসে গিয়ে রিটার্ন দেওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, কেউ যদি অফিসে এসে রিটার্ন দিতে চান, সেই সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। অনলাইনেও জমা দেওয়া যাবে। একান্তই যদি কেউ রিটার্ন দিতে না পারেন, তাহলে জরিমানাসহ পরেও রিটার্ন দেওয়া যাবে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, অনলাইন রিটার্ন জমায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বেশ পিছিয়ে আছে। তবে অন্য ভ্যাট কমিশনারেটগুলোর অবস্থান বেশ ভালো। ওই সব কমিশনারেটে মোট ভ্যাটদাতার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দেন। এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই লকডাউন পরিস্থিতিতে অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়া খুব বেশি কঠিন হবে না। কিন্তু যাঁরা পুরোনো পদ্ধতিতে দেবেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁদের কিছুটা সমস্যা হবে।

যশোর ভ্যাট কমিশনারেটে ৯ হাজার ৬০০ প্রতিষ্ঠান আছে। কমিশনার জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই কমিশনারেটে প্রায় ৯৯ শতাংশ অনলাইনে জমা হয়। তাই ভ্যাটদাতারা সহজেই ঘরে বসে রিটার্ন দিতে পারবেন। ইতিমধে এক–তৃতীয়াংশ ভ্যাটদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিয়ে ফেলেছেন।’