বাজারে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজ, রসুন, আদার দাম

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগে বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম। যে পেঁয়াজ কিছুদিন আগেও কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ছিল, তা এখন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। অবশ্য দাম বৃদ্ধিতে পেঁয়াজকে অনেকটাই ছাড়িয়ে গেছে আদা ও রসুন।

বাজারে চীনা আদার দাম কেজিপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় উঠেছে। ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজিতে চীনা আদার পাওয়া যাচ্ছে কারওয়ান বাজার, মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের মতো বড় বাজারে। ছোট বাজারে চীনা আদা ৩০০ টাকাতেই কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের, যা এক সপ্তাহ আগেও কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা ছিল।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, বাজারে এক সপ্তাহে আমদানি করা আদার দাম প্রায় ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। আর দেশি আদার দাম বেড়েছে ৬১ শতাংশ। বড় বাজারে দেশি আদা কেজিপ্রতি ২২০ টাকা ও ছোট বাজারে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

পুরান ঢাকার মসলাজাতীয় পণ্যের পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে চীনা আদা ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি এবং মিয়ানমারের আদা ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশে এখন রসুনের ভরা মৌসুম। কিন্তু তার দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

দেশে গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি শুরুর আগে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি রসুন ৮০ টাকার কাছাকাছি দরে বিক্রি হয়েছে। এখন তার কেজিপ্রতি দর কোথাও ১৫০ টাকা, কোথাও ১৮০ টাকা।

পাইকারি বাজারেই দেশি রসুনের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, কিছুদিন আগেও দেশি রসুন ৬০ থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে ছিল। এখন সেটা ১০৫ টাকা কেজির আশপাশে বিক্রি হচ্ছে।

শ্যামবাজারে চীনা রসুনের কেজিপ্রতি দর উঠেছে মানভেদে ১২৫ থেকে ১৪০ টাকা। সেটা খুচরা বাজারে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা।

রসুনের মতো এখন পেঁয়াজেরও ভরা মৌসুম। গত মাসে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ যখন বাজারে আসতে শুরু করে, তখন দাম কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় নেমেছিল। এখন সেই পেঁয়াজ আবার ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় উঠেছে।
সব মিলিয়ে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের বাজারে খরচ বেড়েছে সাধারণ মানুষের।

দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা সরবরাহ সংকটকে দায়ী করছেন। তাঁরা বলছেন, খুচরা বিক্রেতারা পণ্য কিনতে পাইকারি বাজারে যেতে পারছেন না। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জেলা ও বন্দর থেকে পণ্য আনতে পারছেন না পরিবহনের অভাবে। বন্দরে জাহাজে থাকা পণ্য খালাসে দেরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। এদিকে ভারত থেকে আমদানিও বন্ধ।

জানতে চাইলে শ্যামবাজারকেন্দ্রিক আমদানিকারক আবদুল মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে চারদিন ধরে পণ্য এসে বসে আছে। খালাস করা যাচ্ছে না। অন্য সময় আদা-রসুন এক দিনেই খালাস হয়। তিনি বলেন, চীন থেকে আদা-রসুন আমদানি হচ্ছে খুব কম। কারণ, কনটেইনারের অভাব।

ব্যবসায়ীরা আরও দাবি করছেন, সরবরাহ–ব্যবস্থা যদি বিঘ্নহীন না হয়, তাহলে একেক জায়গায় একেক দাম দেখা যায়। এখন সেটাই চলছে। গ্রামে অনেক ক্ষেত্রেই দাম কম, শহরে চড়া। এক বাজারের সঙ্গে আরেক (খুচরা) বাজারের পাথর্ক্য অনেক।

জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, সমস্যা হলো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সরবরাহ সমস্যা দূর করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দল কাজ করছে। বিষয়গুলো সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

বাজারে চাল, ডাল ও ভোজ্যতেলের দাম আগে থেকেই চড়া। এখন বাড়ল পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম। এটা এমন এক সময়ে হলো, যখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্থবিরতায় মানুষের আয় কমে গেছে।

ঢাকার শেওড়াপাড়ার এক রেঁস্তোরার কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যা বেতন পেতেন, তার সমপরিমাণ বকশিস পেতেন। তাই দিয়ে সংসার মোটামুটি চলত। ১৫ দিন ধরে আয় নেই। তিনি বলেন, এখন খুব জরুরি না হলে কিছু কিনি না। যা না কিনলেই নয়, বাজারে সেগুলোর দামই চড়া।