আগে জীবিকার ব্যবস্থা, পরে অর্থনীতি

আহসান এইচ মনসুর
আহসান এইচ মনসুর

সরকারের কাজ আগে জনস্বার্থ দেখা। করোনাভাইরাসের কারণে একটা বড় জনগোষ্ঠী খাদ্যের সংকটে পড়েছে। আমার হিসাবে ৪ থেকে ৫ কোটি মানুষ নিয়মিত খাবার পাচ্ছে না। এখনই তাদের খাবার ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো দেখা যাবে, সেটা আরও পরে হলেও চলবে।

এ ছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ লোক বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেকে গ্রামে চলে গেছেন। আপাতত তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাঁরা আবার উপার্জন করতে পারবেন। এসব ব্যবস্থা না করলে পরিস্থিতি সরকারের অনুকূলে থাকবে না।

করোনার কারণে ৪০ শতাংশ নাগরিক দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। আগে ২০ শতাংশ মানুষ ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে। যাদের খাবার নেই, তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে সরকারকে বড় ধরনের কর্মযজ্ঞ শুরু করতে হবে। আমার হিসাবে কমপক্ষে ৪০ লাখ টন খাদ্য মজুত ও বিতরণ করতে হবে। এ জন্য বড় ধরনের অর্থ বরাদ্দ লাগবে, সেটা কোথা থেকে আসবে, তা ঠিক করতে হবে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

শুধু মজুত করলেই চলবে না, ঠিকমতো বিতরণ করতে হবে। কীভাবে ত্রাণ বিতরণ হবে, তার কিছুই ঠিক করা হয়নি। ত্রাণ বিতরণ করতে হবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে। কেন জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) এ ক্ষেত্রে যুক্ত করা হচ্ছে? ডিসিদের আরও অনেক কাজ রয়েছে।

এ ক্ষেত্রে বেসরকারি এনজিওদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। ব্র্যাক, আশা, গ্রামীণ ব্যাংকের সারা দেশের প্রতিটি গ্রামে প্রতিনিধি রয়েছে। তারা বের করতে পারবে, কারা না খেয়ে আছেন। তাদের মাধ্যমে খাদ্য বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এটা এখনই শুরু করতে হবে। আগে জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে, তারপর অর্থনৈতিক বিষয় দেখা যাবে।

আমাদের একটি বড় দুর্বলতা রয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। সেটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সবার মধ্যে আস্থাহীনতা কাজ করছে। সরকারের কাছের লোকজন ছাড়া আর কেউ মনে করছেন না যে তাঁরা আক্রান্ত হলে চিকিৎসা পাবেন। এটা নিয়ে সরকারকে কাজ শুরু করতে হবে।

সরকার যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তার সুবিধা যেন ঋণখেলাপিরা না পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। ঋণখেলাপিরা ইতিমধ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা নিয়েছেন। এ প্যাকেজ থেকে তাঁদের সুবিধা নিলে এসব ঋণ আবার খেলাপি হয়ে পড়বে। ফলে ব্যাংক খাত আরও চাপে পড়ে যাবে। আমার প্রস্তাব, ভালো যেসব গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, শুধু তাঁরাই এই প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত থাকুন।

 আহসান এইচ মনসুর : নির্বাহী পরিচালক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট