মোবাইলে হাজার টাকা উত্তোলনে মাসে একবার মাশুল মওকুফ

প্রতীকী ছবি: এএফপি
প্রতীকী ছবি: এএফপি

দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১৯ মার্চ দিনে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা উত্তোলনে মাশুল না কাটার নির্দেশনা দেয় মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কিন্তু তাতে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে তারা প্রতিদিনের বদলে মাসে একবার এক হাজার টাকা উত্তোলনে মাশুল মওকুফ সুবিধা দিচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর তা পরিপালন না করা নিয়ে গ্রাহকের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করেই তারা মাসে একবার এক হাজার টাকা উত্তোলনে মাশুল মওকুফ করেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন পর্যন্ত আগের নির্দেশনা প্রত্যাহার করেনি, আবার নতুন করে কোনো নির্দেশনাও দেয়নি।
করোনার প্রকোপ শুরুর পর এমএফএসের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। জরুরি কেনাকাটা থেকে শুরু করে টাকা পাঠানো, বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জসহ বিভিন্ন ধরনের আর্থিক লেনদেনে বিকাশ, নগদ, রকেটের ব্যবহার বেড়েছে। তবে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকা লকডাউন থাকায় কমে গেছে কেনাকাটা ও বিল পরিশোধ। ফলে লেনদেন আগের চেয়ে কিছুটা কমে গেছে।
গত ১৯ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, বিকাশ-রকেটের মতো এমএফএস সেবা ব্যবহার করে জরুরি ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় কোনো মাশুল কাটা যাবে না। পাশাপাশি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে প্রতি মাসের লেনদেনের সীমা ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়। একই সঙ্গে দিনে একবার ১ হাজার টাকা উত্তোলনে কোনো মাশুল না কাটার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং ওষুধ বিক্রয়কারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত ব্যাংক, এমএফএস, এজেন্ট ব্যাংকিং ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) হিসাবকে ব্যবসায়িক লেনদেনে ব্যবহার করা যাবে বলে জানানো হয়।
এদিকে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানতে গিয়ে তারা বড় ধরনের লোকসানে পড়ে। এজেন্টরা প্রতি লেনদেনের ভিত্তিতে কমিশন পায়। দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সিদ্ধান্ত আসার পর যেখানে ১০ হাজার টাকা একবারে উত্তোলন করা সম্ভব ছিল, সেটি না করে ১০ বারে উত্তোলন করছে। এতে লেনদেন সংখ্যা এক দিনেই কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এ অবস্থায় প্রতি লেনদেনের ভিত্তিতে এজেন্টদের কমিশন দিতে গেলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তাই দিনের পরিবর্তে মাসে একবার ১ হাজার টাকা উত্তোলনে মাশুল না কাটার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
দেশের শীর্ষ এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ একটি হিসাব থেকে মাসে শুধু একবার ১ হাজার টাকা উত্তোলনে কোনো মাশুল নিচ্ছে না। আর জরুরি কেনাকাটার জন্য ৫০০ টাকা লেনদেন বিনা মাশুলে করার সুযোগ দিয়েছে। বর্তমানে বিকাশ থেকে ১ হাজার টাকা উত্তোলনে সাড়ে ১৮ টাকা মাশুল কাটা হয়। বর্তমানে বিকাশে দিনে ৭৫০ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিনা মাশুলে দিনে ১ হাজার টাকা উত্তোলনের সুযোগ দিতে গিয়ে আমাদের বড় লোকসান হচ্ছিল। কারণ, গ্রাহকের কাছ থেকে মাশুল না নিলেও প্রতি লেনদেনের জন্য এজেন্ট ও মোবাইল অপারেটরদের ঠিকই টাকা দিতে হচ্ছে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে পরে তা দিনের পরিবর্তে মাসে একবার করা হয়েছে।
ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এমএফএস রকেটও মাসে একবার ১ হাজার টাকা উত্তোলনে মাশুল মওকুফ করেছে। রকেটে ১ হাজার টাকা উত্তোলনে সাড়ে ১৮ টাকা মাশুল কাটা হয়।
জানতে চাইলে ডাচ্​-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, সেভাবেই মাশুল কাটা হচ্ছে। এর কোনো ব্যত্যয় হয়নি।
সারা দেশে ২ কোটি ৭০ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে। দেশজুড়ে এ সেবা দিতে রয়েছে প্রায় ১০ লাখ এজেন্ট। করোনার আগে দৈনিক প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা লেনদেন হতো এ সেবায়। শীর্ষে রয়েছে বিকাশ, এরপরই ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের রকেট।