তারল্য ঠিক রাখতে প্রয়োজনে টাকা ছাপাতে হবে

>সারা বিশ্বের মতো করোনায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। করোনার বিস্তার ঠেকাতে সরকার ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। হাতে গোনা কিছু শিল্পকারখানা ছাড়া বেশির ভাগেরই চাকা ঘুরছে না। কর্মহীন বিপুলসংখ্যক মানুষ এখন গৃহবন্দী। এরই মধ্যে অর্থনীতিতে তার নানামুখী প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তবে করোনায় অর্থনীতিতে কতটা ক্ষত তৈরি করবে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে না পারলেও এ ক্ষত যে শিগগিরই কাটবে না, সে ব্যাপারে একমত অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। অর্থনীতির চাকা সচল করতে করণীয় কী, এ নিয়ে দিয়েছেন নানা পরামর্শ। তাই নিয়ে এই আয়োজন।
ফজলে ফাহিম
ফজলে ফাহিম

বাংলাদেশ তো বটেই, গোটা বিশ্বই এমন বিপদে এর আগে আর কখনো পড়েনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার আগে নজর দিতে হবে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনার দিকে। আর অর্থনীতির কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হবে এরই মধ্যে বেশ খারাপ হয়েছে। আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ভালো দিক হচ্ছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই সরকার কিছু প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কিছু শিল্প-বাণিজ্যকেন্দ্রিক, কিছু আবার সামাজিক নিরাপত্তাকেন্দ্রিক। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ঘোষিত প্রণোদনার বাস্তবায়নও শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে শিল্প খাতের প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে। এগুলো আরও সহজ হওয়া দরকার। জটিল হলে সরকারের উদ্দেশ্য যেমন মার খায়, ক্ষতিগ্রস্তরাও সুবিধা নিতে পারে না। তাই এগুলোতে কিছু পরিবর্তন আনা দরকার।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের কারখানার মালিকদের অস্তিত্ব যখন সংকটের মুখে, সেখানে তাঁদের জন্য করা নীতিমালা আরও শিথিল হওয়া দরকার। কেউ এখানে পুরো টাকা নিয়ে যাবে না। আর স্বল্প সুদে ঋণও দেওয়া হবে পুরো খাতকে, একক কোনো ব্যক্তি বা শিল্পগোষ্ঠীকে নয়। তা ছাড়া, ব্যাংকগুলো তো এমনিতেই তাদের ঋণ দিত। আমরা জানি, ব্যাংকগুলোর কিছু টাকা অব্যবহৃত থেকে যায়। ওইগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রণোদনাটা প্রয়োজনে আরও বড় করতে পারে সরকার। আর ঋণের অঙ্কটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্লক করে রাখার ব্যবস্থাও নিতে পারে। মোট কথা হচ্ছে কাউকে চাপে ফেলে কিছু করা যাবে না।

 ব্যাংক খাতের তারল্য পরিস্থিতি ঠিক রাখতে হবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রয়োজনে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজন দেখা দিলে টাকাও ছাপাতে হবে। এফবিসিসিআই থেকে আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। শিগগির তিন বছর মেয়াদি কিছু প্রস্তাব দেওয়া হবে সরকারকে। এর মধ্যে জোর দেওয়া হবে অভ্যন্তরীণ খাতের শক্তিশালী অবস্থা বজায় রাখার ওপর। অর্থনীতির স্বার্থেই রাজস্ব ও রাজস্ববিহীন (ফিসকাল-ননফিসকাল) দুই ধরনের সহযোগিতাই লাগবে।

 পোশাক খাত নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না। শুরুর দিকে অনেকেই ভয় দেখাচ্ছিলেন। তবে বিদেশি ক্রেতারা এখন ঠিকই বলছেন, যে আদেশগুলো তাঁরা দিয়েছিলেন, সে আদেশের পণ্য তাঁরা নেবেন। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, অন্য দেশগুলো যেভাবে করছে, তা অনুসরণ করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কারখানাও খোলা রাখা যেতে পারে। তবে হুটহাট করে নয়। করতে হবে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে এবং যথেষ্ট দূরত্ব অনুসরণ করে। দরকার হলে ৫০ শতাংশ কর্মী কাজ করবেন। তবু স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কারখানা চালাতে হবে।

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত সবচেয়ে বিপদে আছে। দেশে ৪৫ লাখ ছোট দোকানি আছেন বলে একটা তথ্য রয়েছে। ছোট হলেও তাঁদের ব্যবসার পরিমাণটা মোটেই কম নয়। এই অবস্থায় বড় প্রশ্ন হচ্ছে, এই ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে কীভাবে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া যাবে।

ফজলে ফাহিম : সভাপতি, এফবিসিসিআই