এডিবির কাছে আরও সহযোগিতা চাইলেন অর্থমন্ত্রী

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের আমদানি-রপ্তানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বেশির ভাগ দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এর ফলে স্থবিরতা নেমে এসেছে প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) প্রবাহেও। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অবিরাম সহযোগিতা চান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আজ সোমবার অর্থমন্ত্রী এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতাসুগু আসাকাওয়ার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি এবং সহযোগিতা নিয়ে ফোনে আলাপচারিতার সময় অর্থমন্ত্রী এ সহযোগিতার অনুরোধ করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের ওপর করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্য এডিবি থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫০ কোটি মার্কিন ডলার পাওয়া গেছে। কয়েক দিন আগে তাৎক্ষণিক সহায়তাও দিয়েছে সংস্থাটি। এ তথ্য উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‌‘আমরা অবশ্যই এডিবিকে অবিরাম সমর্থন ও সহায়তার জন্য অনুরোধ করছি। এই ক্রান্তিকালে এডিবির তৎক্ষণিক সহায়তাটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতে আমাদের দরকার আরও বেশি। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য আরও ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দরকার।’

অর্থমন্ত্রী জানান, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চিকিৎসাকর্মী, বেসামরিক প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রদানকারীদের জন্য দরকার ১০ কোটি ডলার, চাকরি হারানো দেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটিরশিল্প খাতের ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে দরকার আরও ১৫ কোটি ডলার। এডিবির প্রেসিডেন্ট এসব বিষয়ে আর্থিক সহায়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন এবং পর্যালোচনা করে বাংলাদেশকে পরে জানাবেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানি না যে এই সংকট কত দিন থাকবে এবং তা আমাদের অর্থনীতিকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এডিবি ২ হাজার কোটি ডলারের সহায়তার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে বলে এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতাসুগু আসাকাওয়ার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। স্বাস্থ্য খাতের জরুরি সেবা ও বাজেট সহায়তার জন্য এডিবি বাংলদেশের জন্য যে ৬০ কোটি ২৪ লাখ ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সে জন্যও তাঁকে ধন্যবাদ জানান মুস্তফা কামাল।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এডিবির প্রেসিডেন্ট বলেছেন এই মহামারি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে, যার ফলে এই অঞ্চলের দারিদ্র্য আরও বাড়তে এবং অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। তিনি বাংলাদেশে এডিবির চলমান প্রকল্প ও পাইপলাইনের প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা করেন এবং সেগুলো দ্রুত সফলভাবে সমাপ্ত করার পদক্ষেপ নিতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।

বর্তমানে বাংলাদেশে এডিবির প্রায় ৮৭০ মার্কিন ডলারের ৬৩টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। পাশাপাশি পাইপলাইনে রয়েছে প্রায় ৯৯৪কোটি ডলার সহায়তার ৮১টি প্রকল্প। এডিবি বাংলাদেশকে এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে। সহায়তাগুলো মূলত বিদ্যুৎ, জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, জলসম্পদ এবং বাংলাদেশের সুশাসন এবং আর্থিক খাতে।

অর্থমন্ত্রী এডিবির প্রেসিডেন্টকে জানান, কোথাও লকডাউন, কোথাও গণছুটি আবার কোথাও কারফিউ জারি করে মানুষকে ঘরবন্দী করা হয়েছে। বাংলাদেশে গত ২৫ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জরুরি সেবা কার্যক্রম ছাড়া সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন দেশের সিংহভাগ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ছোটখাটো কারখানা বন্ধ। গণপরিবহন ও বিমান চলাচল স্থগিত। প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষ ও অর্থনীতির জন্য ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতাসুগু আসাকাওয়া বাংলাদেশের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন।