চীন থেকে ভারতে যাচ্ছে উৎপাদন

রয়টার্স প্রতীকী ছবি
রয়টার্স প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসের প্রকোপে বদলে যাচ্ছে বিশ্ব পরিস্থিতি। যে চীন মুক্তবাজারের হাত ধরে বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদনকারীতে পরিণত হয়েছিল, এই অবস্থায় সেই বাস্তবতা বদলাতে শুরু করেছে।
ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর, বিশ্বের প্রায় এক হাজার কোম্পানি ভারতীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে, কীভাবে ভারতে কারখানা নিয়ে আসা যায়। এদের মধ্যে অন্তত ৩০০ টি কোম্পানি খুবই সক্রিয়। তারা মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক পণ্য, চিকিৎসা সামগ্রী, কৃত্রিম তন্তু উৎপাদনের কারখানা ভারতে সরিয়ে আনতে চায়।
ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের সূত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই কোম্পানিগুলো ভারতকে উৎপাদনের বিকল্প উৎস হিসেবে বিবেচনা করছে। এ লক্ষ্যে তারা ভারতের বিনিয়োগ উন্নয়ন দপ্তর, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই এক হাজার কোম্পানির মধ্যে ৩০০ কোম্পানিকে তাঁরা লক্ষ্যবস্তু করেছেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম বিজনেস টুডেকে এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা আশাবাদী, করোনাভাইরাস একবার নিয়ন্ত্রণে আসলে কারখানা স্থানান্তর প্রক্রিয়া বাস্তব রূপ পাবে। তখন ভারত উৎপাদনের বিকল্প উৎস হয়ে উঠবে। জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো অনেক দেশ এখন চীনের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল, ব্যাপারটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার।'
ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে উৎপাদন বাড়াতে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে করপোরেট কর হার কমিয়ে ২৫ দশমিক ১৭ শতাংশ করেছে। নতুন উৎপাদকদের জন্য তো এই হার দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে এসেছে ভারত। তা মাত্র ১৭ শতাংশ। করের নিম্নহার ও গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) বদৌলতে ভারত উৎপাদন খাতের বিনিয়োগের বড় একটি অংশ করায়ত্ত করতে চায়।
কর হার হ্রাসের পর ভারত এখন উৎপাদনের খরচ কমানোয় নজর দিয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলা নিয়ে চীন এখন অনেকের বন্দুকের নলের মুখে। এই পরিস্থিতিতে বড় দেশগুলো উৎপাদন কারখানা চীন থেকে সরিয়ে আনবে, এমনটাই প্রত্যাশা অর্থনৈতিক মহলের।
চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে 'চীনা ভাইরাস' আখ্যা দিয়েছেন। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এও বলেন, 'এই ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার আগেই তা থামানো যেত, কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে সারা পৃথিবী এখন ভুগছে।'

বাণিজ্য যুদ্ধ তো চলছিলই, তার সঙ্গে যুক্ত হলো এই করোনাভাইরাস, এই পরিস্থিতিতে চীনের বিরুদ্ধে এক ধরনের বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে জাপান তার কোম্পানিগুলোকে চীন থেকে কারখানা সরিয়ে নিতে ২০০ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। আরও অনেক দেশ সেই পথ অনুসরণ করবে। এতে ভারতের লাভ হবে বলে মনে করছে দেশটির নীতি নির্ধারকেরা।
তবে ভারতের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উৎপাদন খরচের ব্যবধান ১০ থেকে ১২ শতাংশ। তবে ভারতের বিশাল বাজার বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে বলে মনে করেন দেশটির প্রোমোশন অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ইন্টারনাল ট্রেড মন্ত্রণালয়ের সচিব গুরুপ্রসাদ মহাপাত্র।
করোনাভাইরাসের বিপর্যয়ের মধ্যে চীন যেন ভারতের দুর্বল কোম্পানিগুলোর অংশীদারি কিনতে না পারে, সে লক্ষ্যে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নীতিতে পরিবর্তন এনেছে ভারত। যেসব দেশের সঙ্গে ভারতের স্থলসীমান্ত আছে, সেখানকার কোনো সংস্থা বা ব্যক্তিকে ভারতীয় কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। 'সুযোগসন্ধানী অধিগ্রহণ' আটকাতেই এই সিদ্ধান্ত। বিশেষজ্ঞদের মত, ইঙ্গিতটা প্রকৃত অর্থে চীনা কোম্পানগিুলোর দিকেই। তারপরেই সোমবার ভারতে চীনের দূতাবাসের মুখপাত্র জি রংয়ের দাবি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম ও অবাধ বাণিজ্য নীতির পরিপন্থী ভারতের এই সিদ্ধান্ত। এতে জ-২০ দেশগুলির মধ্যে হওয়া ঐকমত্য ভেঙে যাচ্ছে এবং বাণিজ্যে বৈষম্য বাড়বে। বেইজিংয়ের আশা, ভারত ভবিষ্যতে এই সিদ্ধান্ত ফিরে দেখবে।