খেজুর আমদানি বেড়েছে ১৬ শতাংশ, বিক্রি কম

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে পবিত্র রমজান উপলক্ষে খেজুর আমদানি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিন্তু দেশজুড়ে চলা সাধারণ ছুটির কারণে বিক্রি একেবারেই কম বলে দাবি করছেন আমদানিকারকেরা।

দেশে প্রতি বছর রোজার আগে প্রচুর খেজুর আমদানি হয়। রোজার মাসজুড়ে খেজুরের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এবার চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে খেঁজুর আমদানি হয়েছে (ঋণপত্র নিষ্পত্তি) ৯ হাজার ২২২ টন। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। আমদানিকারকেরা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ খেজুর ছুটি শুরুর আগেই বন্দর থেকে খালাস হয়ে গেছে।

যদিও এখন বন্দরে আপেল, মাল্টা ও নাশপতির বিপুল চালান রয়েছে। আমদানিকারকেরা জানান, বাজারে চাহিদা না থাকা ও সংরক্ষণ সুবিধার অভাবে এসব ফল তারা খালাস করছেন না। বন্দরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে থাকায় ফলগুলো ভালো থাকছে। খালাস করলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফল আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'এই সময়ে সাধারণত যে পরিমাণ ফল বিক্রি হয়, এখন হচ্ছে তার ২৫ শতাংশ। তাও লোকসানে। আমরা রোজার বাজার ধরতে ফল আমদানি করে এখন ব্যাপক সংকটে রয়েছি।'

দেশে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। সেটা আরও বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত করা হয়েছে।

ঢাকার বাদামতলী ফলের বড় আড়তগুলোর একটি। সেখানকার বিক্রেতারা জানান, কেনাকাটার এখন সবচেয়ে ভরা মৌসুম। কিন্তু ক্রেতার আনাগোনা কম। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। বের হলেও জরুরি পণ্য ছাড়া কিছু কিনছে না। সব মিলিয়ে ফলের চাহিদায় ধস নেমেছে।

বাদামতলীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাহিদা কমে যাওয়ায় ফলের দামও কমেছে। যেমন বাজারের সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হয় ইরাকের জাহেদি খেজুর। এটার আমদানির পরিমাণই বেশি, মোট আমদানির ৮০ শতাংশ। বস্তায় আনা জাহেদি খেজুরের কেজিপ্রতি দর ৭০ থেকে ৯০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছুটি শুরুর আগে দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেশি ছিল। কার্টনে প্যাকেট করে আনা জাহেদি খেজুরের দর পড়ছে ১০০ টাকার আশপাশে।

মাঝারি দামের বিভিন্ন খেজুরের দামও কিছুটা কমতি। পাইকারিতে সংযুক্ত আরব-আমিরাত থেকে আসা আমিরাত গোল্ড খেজুরের কেজি ৯৫ থেকে ১০০ টাকা, নাগাল খেজুরের কেজি ১২০ টাকা, বরই খেজুরের কেজি ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকা, ধাবাস খেজুর ১৭৫ থেকে ১৯০ টাকা ও মদিনা-মনোয়ারা খেজুর ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কিন্তু মরিয়ম ও আজওয়া খেজুরের দাম আগের মতোই চড়া। মরিয়ম খেজুরের কেজি ৬৫০ টাকা থেকে শুরু। আজোয়ার কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।

এবার অবশ্য আমদানিতে খরচও বেশি পড়েছে। এর কারণ ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ণ ও বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে প্রতি মেট্রিক টন খেঁজুরের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে গড়ে ৭২১ ডলার দরে। ফেব্রুয়ারিতে তা কিছুটা বেড়ে ৭৩৯ ডলারে উন্নীত হয়। মার্চে অনেকটাই বেড়ে যায়, গড় দাম দাঁড়ায় ৮৩৬ ডলার।

ঢাকার সাধারণ খুচরা বাজারে ২২০ থেকে ২৫০ টাকার কেজির মধ্যে সাধারণ খেজুর পাওয়া যায়। মানভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজির মধ্যে বিক্রি হয় বরই, ধাবাস, মদিনা-মনোয়ারা ইত্যাদি খেজুর। খুচরায় মরিয়ম খেজুরের কেজি ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা। আর আজওয়া দেড় হাজার টাকা কেজির নিচে পাওয়া কঠিন।

কয়েকটি অনলাইন ই-কমার্স সাইট ঘুরে দেখা যায়, সেখানে মরিয়ম খেজুর মানভেদে ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা কেজির মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর আজওয়া পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা কেজিতে।

প্যাকেটজাত ধাবাস, বরই ইত্যাদি খেঁজুর ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন ই-কমার্স ভিত্তিক বিক্রেতারা।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে সাধারণ খেজুরের দাম এখন গত বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি, কেজিপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। ফলে দেখা যাচ্ছে, পাইকারি বাজারে দাম কমার সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না।

ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ৫০০ কনটেইনার ফল জমেছে। সেগুলো তারা অল্প অল্প করে খালাস করছেন।

বাদামতলীতে ২০ কেজির এক কার্টন চীনা ফুজি আপেলের দাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ফলে কেজি পড়ছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। যা সাধারণত ৯০ থেকে ১০০ টাকা থাকে।

কিছু কিছু এলাকায় ভ্রাম্যমান বিক্রেতারা ফলও বিক্রি শুরু করেছেন। কাজীপাড়ায় ফুজি আপেল বিক্রি করছিলেন আশরাফ উদ্দিন। কেজিপ্রতি ১০০ টাকা চাইছিলেন তিনি। বললেন, পাইকারি বাজারে বেশ কম দাম পেয়ে নিয়ে এসেছেন। রোজার আগে বাড়তি কেনাবেচার আশাও করছেন তিনি।

অবশ্য অন্যান্য আমদানি করা ফলের দাম বেশ চড়া। মাল্টা ও নাশপতি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে। বেদানার কেজি ৩৫০ টাকা বা তার বেশি। বাজারভেদে দামের ভিন্নতা রয়েছে। দেশি মৌসুমী ফলের দাম কিন্তু কম। তরমুজ ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজির মধ্যে মিলছে। তবুও বিক্রি কম। চাষিরা দাম পাচ্ছে না।

ফল ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, আম ও লিচু বাজারে আসবে রোজার শেষ দিকে।

নিম্ন আয়ের মানুষের অবশ্য ফলের দাম নিয়ে কিছু আসে যায় না। তাদের চিন্তা চাল, ডাল, পেঁয়াজের চড়া দাম নিয়ে। রিকশাচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, সব খরচ বাদ দিয়ে দিনে তাঁর ৫০০ টাকা আয় থাকত। এখন সেটা ১৫০ টাকাও হয় না। সংসারের চাল-ডাল কেনাই কঠিন হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০১০ অনুযায়ী, ওই সময় দেশে মাথাপিছু ফল গ্রহণ ছিল দৈনিক গড়ে ৪৫ গ্রাম। ২০১৬ সালের জরিপ দেখা যায়, সেটা কমে ৩৬ গ্রামে নেমেছে।