করোনা সংকটেও থেমে নেই প্রবাসী আয়

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেও দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশিরা আয় (রেমিট্যান্স) পাঠানো অব্যাহত রেখেছে। সারা দেশের ব্যাংক শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং,মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) ও এনজিওদের মাধ্যমে তা পৌঁছে যাচ্ছে সুবিধাভোগীদের কাছে। চলতি মাসের প্রথম ১৬ দিনে প্রবাসীরা ৪৪ কোটি ২০ লাখ ডলার আয় পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৩ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। আর গত মার্চের পুরো সময়ে এসেছিল এসেছিল ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলার।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশি শ্রমিকেরা আছেন, এমন অনেক দেশ এখনো লকডাউন হয় নি। আবার লকডাউন হলেও পরিবার চালাতে ঋণ করে হলেও অনেকে টাকা পাঠাচ্ছেন। করোনার কারণে উন্নত দেশ থেকেও আয় আসা বেড়েছে। তবে এভাবে কতদিন আসবে তা অনিশ্চিত। এখনই প্রবাসীদের সহায়তায় সরকারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

জানা গেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে ভালো সূচক ছিল প্রবাসী আয়। করোনার কারণে কমে গেছে প্রবাসী আয়। প্রবাসী–অধ্যুষিত দেশগুলো ভাইরাসে নাস্তানাবুদ, দীর্ঘদিন ধরে চলছে লকডাউন। সবচেয়ে বেশি আয় আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে।

ব্যাংকটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া প্রথম আলোকে বলেন,'মধ্যপ্রাচ্যে থাকা লোকজন পরিবার চালাতে এখনো আয় পাঠাচ্ছে। তবে এভাবে কতদিন পাঠাবে, এটা অনিশ্চিত। আমরা শাখা ও এজেন্টদের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বিতরণ অব্যাহত রেখেছি।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ আয় এসেছিল ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। গত বছরের মার্চ মাসে এসেছিল ১৪৫ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। ফলে গত মার্চেই আয় কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ১৪৫ কোটি ডলারের আয় এসেছিল। আর দেশে গত ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৬৯ কোটি ডলার, যা জানুয়ারিতে ৫ কোটি ডলার কমে নেমে যায় ১৬৪ কোটি ডলারে।

জানা গেছে, যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসে, সেসব দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রেমিট্যান্স হাউস ও ব্যাংকগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশি শ্রমিকেরাও পড়েছেন বিপদের মুখে। দেশের প্রবাসী আয় আহরণের শীর্ষ ১৫টি উৎস দেশ হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, ইতালি, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া ও জর্ডান।

বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। সেই অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন। বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এর ফলে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে গিয়েছিল। এখন তাতে বড় আঘাত হানল করোনাভাইরাস।

এদিকে বিকাশ জানিয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত কেবল বিকাশের মাধ্যমে ১৩৮ কোটি টাকা আয় এসেছে। সবচেয়ে বেশি আয় এসেছে মালয়শিয়া,সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য থেকে। এছাড়াও, যেসব প্রবাসী বিকাশের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন- তাদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবার উদ্যোগ নিয়েছে বিকাশ ও ডিজিটাল হেলথকেয়ার। এই কার্যক্রমের আওতায় প্রবাসীর পরিবারের সদস্যরা ঘরে থেকেই জরুরী প্রয়োজনে তিন মাসে ৯০ মিনিট পর্যন্ত ফোনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সেবা নিতে পারবেন। এছাড়া যাদের হাসপাতালে ভর্তি হবে,তারা হাসপাতাল থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ সহায়তা পাবেন।