এই যুদ্ধ পরিস্থিতি পরিবর্তনের দুয়ার খুলে দিয়েছে

>করোনার কারণে বিশ্ব আজ বলতে গেলে অবরুদ্ধ। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। ভেঙে পড়েছে সরবরাহ ব্যবস্থা, স্থবির অর্থনীতির চাকা। জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে পরিবহন-যোগাযাগ বন্ধ। এক দেশের মানুষ অন্য দেশে যায় না, যেতে পারেও না। এমনকি পাশের বাড়ি কিংবা পার্শ্ববর্তী এলাকাতেও আসা-যাওয়া নিষেধ। সব মিলিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় বিশ্বজুড়ে থমকে গেছে মানবজীবন। তবে এটিই শেষ কথা নয়। করোনার এই পরিস্থিতি থেকে একদিন মুক্তি পাবে পৃথিবী। তখন কেমন হবে বৈশ্বিক অর্থনীতির চালচিত্র? অর্থনীতির বিশ্বখ্যাত বিশ্লেষক শুনিয়েছেন আশার কথা, ভয়াবহ এই মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিকে চিরতরে বদলে দেবে। স্থায়ী পরিবর্তন ঘটবে রাজনীতিরও। অভিমতগুলো নিয়েছে ফরেন পলিসি ডটকম।
রবার্ট জে শিলার
রবার্ট জে শিলার

বিশ্বে সময়ে সময়ে কিছু মৌলিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। বিশেষ করে যুদ্ধের সময়ই পরিবর্তন দেখা যায়। তবে এবারের যুদ্ধে শত্রু পক্ষ কোনো বিদেশি শক্তি নয়। এবারকার শত্রু হলো একটি ভাইরাস, যেটির নাম কোভিড- ১৯ বা করোনাভাইরাস। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস বিশ্বব্যাপী এক যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এর ফলে বিশ্বে হঠাৎ পরিবর্তনের সম্ভাবনা জেগে উঠেছে বলে মনে হয়।

করোনা মহামারির কারণে যে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে, তাতে বড় দুর্ভোগের আশঙ্কা যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনি বীরত্বগাথা লেখার সম্ভাবনাও রয়েছে এই সময়ে। যুদ্ধ কেবল কোনো একটি দেশের জনগণকেই ঐক্যবদ্ধ করে তা নয়, বরং সবাই করোনাভাইরাসের মতো অভিন্ন একধরনের শত্রুকে মুখোমুখি হওয়ায় বিভিন্ন দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়। এমন সময়ে যাঁরা উন্নত দেশগুলোতে বাস করেন, তাঁরা দরিদ্র দেশগুলোর জনগণের দুর্ভোগের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন। কারণ, তাঁরা যে সমস্যার মুখোমুখি, সেটিও তো একই ধরনের। সুতরাং করোনা মহামারি আমাদের যে ঐক্যবদ্ধ করে তুলছে, তা বলাই যায়। হঠাৎ করে আমাদের পৃথিবীটা যেন ছোট হয়ে আসছে এবং অধিকতর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কময় হয়ে উঠছে।

 বর্তমান বিশ্বকে নিয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কেননা করোনা মহামারি আমাদের সামনে নতুন উপায় খুঁজে বের করার সুযোগ এনে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তবে আশা করা যায়, তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, যা সমাজে বিদ্যমান বৃহত্তর বৈষম্যের প্রবণতা কমাবে। দেশে দেশে মানে অনেক দেশের সরকার জরুরি ভিত্তিতে সাধারণ জনগণের হাতে অর্থকড়ি পৌঁছে দিচ্ছে। আর এই অর্থ পৌঁছে দেওয়াটা যেন সর্বজনীনভাবে মানুষের মৌলিক আয়ের উপায় হয়ে উঠছে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চালু করা অধিকতর উন্নত ধরনের সর্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা নতুন আর্থিক প্রণোদনা বা চালিকা শক্তি হিসেবেই যেন আবির্ভূত হয়েছে। এভাবে আমরা সবাই চলতি বছরে নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রেরণা খুঁজে পাব। ফলে দেশগুলো মিলেমিশে ঝুঁকি মোকাবিলায় এগিয়ে আসবে। বদৌলতে বর্তমান বিশ্বে বিরাজমান এই যুদ্ধ পরিস্থিতি বিলীন হবে বা এর অবসান ঘটবে। আর নতুনভাবে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো তখন টিকে থাকবে।

রবার্ট জে শিলার: অর্থনীতির অধ্যাপক, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৩ সালে অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী।