পোশাক ছাড়া খুলছে অন্য কারখানাও

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
>এরই মধ্যে কয়েকজন পোশাকশ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন
তাই তদারকি বাড়ানোর তাগিদ

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের বাইরে অন্য শিল্পকারখানাও চালু হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকার রি-রোলিং, সিমেন্ট, কেব্‌লস, ট্যানারি, প্যাকেজিং, জুতাসহ বিভিন্ন ধরনের কারখানায় আংশিক বা পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয়েছে।

পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনা না মানায় ইতিমধ্যে কয়েকজন পোশাকশ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অন্য শিল্পকারখানার শ্রমিকেরাও করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন শ্রমিকনেতারা। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, পোশাকের বাইরে অন্য কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানছে কি না, সেটির দিকে খুব বেশি মনোযোগ নেই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই), শিল্প পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ২৩ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে সব কলকারখানা কর্তৃপক্ষ চাইলে চালু রাখতে পারবে। সেই ধারাবাহিকতায় ২৬ এপ্রিল পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়। তারপর অন্য শিল্পকারখানাও খুলতে শুরু করে।

শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় শিল্পকারখানা রয়েছে ৭ হাজার ৬০২টি। এর মধ্যে গতকাল শনিবার উৎপাদনে ছিল ২ হাজার ৫৯২টি। এগুলোর মধ্যে পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৬৮০টি। অন্যান্য কারখানা ৯১২টি।

জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোশাকের মতো শ্রমঘন না হওয়ায় অন্য শিল্পকারখানার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটা সহজ। আমাদের কর্মকর্তারা সব ধরনের কারখানার তদারকি করছে। যেখানেই নিয়মের ব্যত্যয় হচ্ছে, সেখানেই অভিযান চালানো হচ্ছে।’

ডিআইএফইর পরিদর্শকের সংখ্যা বর্তমানে ২২৩। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে সীমিত পরিসরে দায়িত্ব পালন করছেন তাঁরা। জানতে চাইলে অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় প্রথম আলোকে বলেন, পোশাকের বাইরে অনেক শিল্পকারখানা চালু হয়েছে। সব কটিতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা আমাদের পরিদর্শকেরা যতটুকু পারছেন পরিদর্শন করছেন।

খুলনা থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, এক মাস বন্ধ থাকার পর খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো ২৬ এপ্রিল থেকে উৎপাদন শুরু করেছে। পাটকলগুলোতে সব মিলিয়ে প্রায় ২৪ হাজার শ্রমিক থাকলেও বর্তমানে সাড়ে ৩ হাজারের মতো কাজ করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মিলগুলো চলছে বলে দাবি করেন কর্মকর্তারা।

আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সেখানে ওষুধ, স্পিনিং মিল, রি-রোলিং মিল, সিমেন্ট, প্যাকেজিং কারখানাসহ ১২৪টি কারখানার বেশির ভাগই চালু হয়েছে। তবে কয়েকজন শ্রমিক জানান, কারখানার ভেতরে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না।

দেশে চামড়াজাত পণ্য ও জুতা তৈরির কারখানার সংখ্যা ১৫০টির বেশি। কারখানাগুলোতে প্রায় দুই লাখ শ্রমিক কাজ করেন। বাংলাদেশ লেদারগুডস ও ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সায়ফুল ইসলাম বলেন, কিছু কারখানায় অর্ধসমাপ্ত কাজ ছিল। আবার কারও নমুনা তৈরির প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। এ কারণে সীমিত শ্রমিক নিয়ে কিছু কারখানা সীমিত পর্যায়ে খুলেছে।

কিছু কিছু ট্যানারি খুলেছে বলেও জানান ট্যানারি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ট্যানারিগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি আগেও তেমন মানা হতো না, এখনো ততটা নেই।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সব শিল্পাঞ্চলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় শ্রমিকের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ডিআইএফই ও শিল্প পুলিশকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।