এপ্রিলে মাত্র ৩৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের কারণে গত এপ্রিল মাসে মাত্র ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। পরিমাণটি কতটা কম, সেটি বোঝার জন্য ২০১৯ সালের এপ্রিলের দিকে তাকাতে হবে। ওই মাসে রপ্তানি হয়েছিল ২৪২ কোটি ডলারের পোশাক। সেই হিসাবে গত মাসে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৮৪ শতাংশের বেশি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বরাত দিয়ে আজ রোববার পোশাক রপ্তানির এই চিত্র জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটি বলেছে, করোনার কারণে ক্রেতারা অনেক ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে। পোশাক কারখানাও বন্ধ ছিল মাসখানেক। ফলে তৈরি পোশাক রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে গেছে।
করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ থেকেই পোশাক রপ্তানিতে ধস নামতে থাকে। তার পরও ওই মাসে ২২৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। তবে সেটি গত বছরের মার্চের চেয়ে ২০ শতাংশ কম। পোশাক খাতের জন্য চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের মধ্যে এটিই ছিল ভয়াবহ। তবে শেষ পর্যন্ত মার্চকেও ছাড়িয়ে গেল এপ্রিল। এক মাসের ব্যবধানেই ১৮৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি কমে গেছে।
বিজিএমইএ জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে ৩৩১ কোটি ডলার, আগস্টে ২৪০, সেপ্টেম্বরে ২৩৪, অক্টোবরে ২৫২, নভেম্বরে ২৫১, ডিসেম্বরে ২৯৩, জানুয়ারিতে ৩০৩, ফেব্রুয়ারিতে ২৭৮, মার্চে ২২৫ এবং এপ্রিলে ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তাতে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
করোনাভাইরাস রুখতে বিশ্বের অনেক দেশেই লকডাউন অবস্থা রয়েছে। দোকানপাট বন্ধ থাকায় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড গত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করতে শুরু করে। বিজিএমইএর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ১ হাজার ১৫০টি কারখানার ৯৮ কোটি পিস পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল হয়েছে। তাতে ৩১৮ কোটি ডলার বা ২৭ হাজার কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
অবশ্য সুইডেনভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম তাদের মনোনীত কারখানায় ইতিমধ্যে যেসব পোশাক তৈরি হয়েছে, সেসব পোশাক নেওয়ার ঘোষণা দেয়। অনেকটা সেই পথেই হাঁটবে বলে ইঙ্গিত দেয় পিভিএইচ, টার্গেট, গ্যাপ ও ভিএফ করপোরেশন, ইন্ডিটেক্স, টেসকো, কিয়াবি, এলপিপিসহ কয়েকটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড। তবে কিছু ব্র্যান্ড মূল্যছাড় দাবি করেছে বলে জানান পোশাক রপ্তানিকারকেরা।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে চলতি অর্থবছর পোশাকের রপ্তানি ৬০০ কোটি ডলার কম হতে পারে। তবে গত এপ্রিলের চেয়ে চলতি মে মাসে পোশাক রপ্তানি বাড়বে। তিনি বলেন, পরিমাণে কম হলেও ক্রেতারা নতুন ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন। কারণ বর্তমানে যেসব ক্রয়াদেশ আসছে সেগুলো নভেম্বর থেকে বিক্রি শুরু হবে। তত দিনে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে ধরে নিয়েই ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন।
যেসব ক্রয়াদেশ ইতিমধ্যে বাতিল বা স্থগিত হয়েছে, সে বিষয়ে ফজলুল হক বলেন, বাতিল বা স্থগিত হওয়া ক্রয়াদেশ নিয়ে বড় রকমের অনিশ্চয়তা রয়েছে। সেগুলো ক্রেতারা আদৌ নেবেন কি না, তা বলা যাচ্ছে না। কারণ প্রত্যেক মৌসুমেই ফ্যাশন পরিবর্তন হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ২ হাজার ৪১০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ১২ শতাংশ কম। শেষ পর্যন্ত কত কম হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।