কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বাড়বে

>পুরো বিশ্বই এখন করোনাযুদ্ধে লিপ্ত। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে হিমশিম খাওয়া রাষ্ট্রগুলোর সামনে আরও আছে বিপর্যস্ত অর্থনীতি। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। করোনায় তছনছ হয়ে যাওয়া অর্থনীতি ফিরবে তো আগের অবস্থায়? কর্মহীন বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান হবে তো? স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিতে কোনো উন্নতি হবে কি? প্রশ্নগুলো এখন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। যদিও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এরই মধ্যে লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। তবু দেশজুড়ে ক্ষুধার্ত ও কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সামাজিক খাতে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, তা নিয়েই এই আয়োজন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ
সালেহউদ্দিন আহমেদ

করোনার কারণে দেশের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ছোট-মাঝারি খাতও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।এতে অনেকেই বেকার হয়ে পড়বেন। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের মতো মৌলিক চাহিদার পেছনেও ব্যয় কমিয়ে ফেলবে। তাতে মানুষের জীবনযাত্রার মান বেশ খানিকটা কমে যাবে। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিও কমে আসবে।

করোনা পরবর্তী সময়ে শ্রমঘন শিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক বাড়বে, এতেও কর্মসংস্থান কমবে। তাই খুব বেশি সংখ্যক মানুষ যাতে কর্মহীন হয়ে না যায় সে জন্য সরকারকে বড় শিল্পের চেয়ে শ্রমঘন ছোট ও মাঝারি শিল্প খাতে বেশি নজর দিতে হবে। শুধু শহর এলাকায় নয়, গ্রামে গঞ্জে যে এসএমই খাত রয়েছে, তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। সবাইকে সমান সুবিধা দেওয়া গেলে তাতে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সাধারন মানুষের কাছে খাদ্য ও টাকা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোাগ নেওয়া হচ্ছে, এটা ভালো। তবে এভাবে খুব বেশিদিন চালানো যাবে না।

করোনার কারণে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে। সময় এসেছে পুরো খাতটিকে ঢেলে সাজানোর। এটি করা অত্যন্ত জরুরি।

বিশ্ব অর্থনীতিতেও নানা ধরনের পরিবর্তন আসবে। এতে আমাদের পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম কমে গেছে, এতে নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে স্থবিরতা দেখা দেবে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আমাদের যে অদক্ষ কর্মী কাজ করেন, তারা কাজ হারাবেন। এতে প্রবাসী আয়েও ধাক্কা লাগবে।

দেশের অর্থনীতিতে করোনার আঘাত নিয়ে এখন যে দুশ্চিন্তা সেটি এতটা প্রকট হতো না, যদি ব্যাংক খাত শক্তিশালী থাকত। এখন তারল্য বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক সংবিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) কিছুটা কমিয়ে ব্যাংকগুলোর বিল-বন্ড কিনে টাকা দিতে পারে। রাজস্ব পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়লে সরকার চাইলে কিছু টাকাও ছাপাতে পারে।

 সালেহউদ্দিন আহমেদ : সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক