সিমকর প্রত্যাহারসহ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় চায় অ্যামটব

মোবাইল অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কয়েকটি ক্ষেত্রে কর ছাড় চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। সংগঠনটি মনে করে, করনীতি যথাযথভাবে সংস্কার করা হলে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) মোবাইল শিল্পের অবদান ৭ শতাংশ থেকে আরও বাড়ানো সম্ভব হবে।

অ্যামটব সিমকর পুরোপুরি তুলে নেওয়া, করপোরেট কর কমানো, ন্যূনতম কর প্রত্যাহার, বিটিআরসিসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর জন্য মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ছাড় ও দ্বৈত কর তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেছে।

আজ বৃহস্পতিবার অ্যামটব এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তারা এ সকল প্রস্তাব সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে উত্থাপন করেছে।

অ্যামটবের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদকে উদ্ধৃত করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে পুরো দেশ এক নজিরবিহীন সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে, মোবাইল শিল্প খাতও এর বাইরে নয়। এই পরিস্থিতিতে মোবাইল শিল্প সকল ধরনের যোগাযোগ, ব্যবসা, বিনোদন ইত্যাদির মেরুদন্ডে পরিণত হয়েছে। আমরা অন্যান্য সময়ের মতো এই কঠিন সময়েও যথাযথভাবে সেবা দান করে যাচ্ছি।' তিনি বলেন, 'যেহেতু এই খাতটি ইতিমধ্যেই করসহ নানা ধরনের সমস্যায় ভূগছে, তাই এখনই সময় এসব দূর করে এই খাতকে উৎসাহিত করা, যাতে ভবিষ্যতে আমরা জাতিকে আরও বেশি সেবা দিতে পারি।'

অ্যামটবের প্রস্তাবে জানানো হয়, বর্তমানে সিম প্রতি ২০০ টাকা হারে কর দিতে হয়। তারা চায় এটা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হোক। অ্যামটব মনে করে, নিম্ন আয়ের মানুষদের মোবাইল সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে বড় বাধা এই সিমকর। অপারেটররা এই অর্থ ভর্তুকি হিসেবে দেয়।

অ্যামটব জানিয়েছে, দেশে মোবাইল শিল্পের জন্য বর্তমান করপোরেট কর ৪৫ শতাংশ। ভারতে তা ২২, পাকিস্তান ও নেপালে ৩০, শ্রীলঙ্কায় ২৮ এবং আফগানিস্তানে ২০ শতাংশ। অ্যামটব করপোরেট করকে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো যৌক্তিক হারে ৩০ শতাংশ করার অনুরোধ করেছে।

ন্যূনতম লেনদেন কর বা টার্নওভার করের বিধান আয়করের নীতি বিরুদ্ধ উল্লেখ করে অ্যামটবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোবাইল অপারেটরগুলোকে ২ শতাংশ হারে কর দিতে হয়, লাভ-লোকসান যা-ই হোক। লোকসান হলে এই কর শেয়ারধারীদের মূলধন থেকে দিতে হয়। শিল্প টিকিয়ে রাখতে ন্যূনতম লেনদেন কর তুলে নেওয়া দরকার।

অ্যামটব বলছে, ২০১২ সালের নতুন ভ্যাট ও এসডি (সম্পূরক শুল্ক) আইনে সরকারী ও নিয়ন্ত্রণক সংস্থাগুলোর জন্য ভ্যাট ছাড় সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। সংস্থাগুলো ভ্যাট নীতি অনুসরণ করছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিবন্ধন ছাড়াই ভ্যাট দাবি বা সংগ্রহ করছে, আবার কোনও ভ্যাট চালান দিচ্ছে না। এটা ভ্যাট আইনের নীতিবিরুদ্ধ।

অ্যামটব সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে ভ্যাট ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে, যা এনবিআর এবং অপারেটর উভয় পক্ষের সম্ভাব্য বিরোধ ও জটিলতা নিরসন করবে বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

অ্যামটব আরও জানায়, দেশের মোবাইল অপারেটরেরা তাদের মোট আয়ের সাড়ে ৫ শতাংশ রাজস্বের অংশ হিসাবে এবং ১ শতাংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে (এসওএফ) বিটিআরসিকে (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে, রাজস্বের জন্য ভ্যাট প্রদান করা হয়, যার অংশ বিটিআরসিকে দেওয়া হয়। বিটিআরসিকে দেওয়া একই রাজস্বের জন্য যখন আবার ভ্যাট প্রদান করা হয় তখন তা দ্বৈত কর হয়ে যায়। অ্যামটব এই দ্বৈত কর পরিহারের প্রস্তাব দিয়েছে।

অ্যামটবের মহাসচিব এস এম ফরহাদ বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি কী হবে তা এখনও অনুমান করা কঠিন। তবে নিয়ন্ত্রণগত, কর ও ভ্যাট সম্পর্কিত সমস্যাগুলো অবিলম্বে সমাধান করা না গেলে খুব শীঘ্রই মোবাইল সেবা খাত বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে অপারেটরদের রাজস্ব আয়ে ইতিমধ্যেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।