আমানতকারীদের দেখার কেউ নেই

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

করোনার আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যাংক খাতের ঋণগ্রহীতাদের নিয়ে খুব ব্যস্ত বাংলাদেশ ব্যাংক। তাঁদের ঋণের সুদ হার কমানো হয়েছে, কিস্তি পরিশোধ না করলেও ঋণ খেলাপি হচ্ছে না। ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জরিমানা ও চক্রবৃদ্ধি সুদ বন্ধ করা হয়েছে।

কিন্তু যাঁদের টাকায় ব্যাংক ব্যবসা করে, ঋণ দেয়, সেসব আমানতকারীর জন্য এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো উদ্যোগ নেই । অনেক আমানতকারী ব্যাংকে গিয়ে তাঁর মাসিক সঞ্চয় স্কিম বা ডিপিএসের টাকা জমা দিতে পারছেন না, কিন্তু তাঁদের জন্য কোনো ব্যবস্থায় নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে টাকা জমা দেওয়ায় বিলম্বের জন্য আমানতকারীদের হয় জরিমানা গুনতে হবে, নয় তো মেয়াদ শেষে সুদ কম পাবেন।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ব্যবস্থা না নিলেও অনেক ব্যাংক নিজ উদ্যোগে আমানতকারীদের সুবিধা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংক সঞ্চয়ের মাসিক কিস্তির টাকা বিলম্বে পরিশোধের সুবিধা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতা, রূপালী, বেসরকারি খাতের এক্সিম, মার্কেন্টাইল, সোশ্যাল ইসলামী, ন্যাশনাল, ঢাকা, যমুনাসহ কয়েকটি ব্যাংক।

জানতে চাইলে যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন বলেন, 'আমরা আমানতকারীদের তিন মাস পর্যন্ত বিলম্বে টাকা জমার সুবিধা দিয়েছি। এ জন্য কোনো জরিমানা হবে না, সুদও কমবে না। ব্যাংকটিতে ডিপিএস হিসাব রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার, এতে জমা রয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা।'

ঢাকা ব্যাংকের ডিপিএস হিসাব রয়েছে ১ লাখ ২ হাজার। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক বলেন, জরিমানা ছাড়া তিন মাস পর্যন্ত টাকা জমার সুবিধা দেওয়া হয়েছে আমানতকারীদের। এ কারণে শাখায় গ্রাহকের চাপ কিছুটা কমেছে।

ইসলামী ব্যাংকের ১৭ লাখ ডিপিএস হিসাব রয়েছে, যাতে জমা রয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকটি আগে থেকেই তিন মাস পর্যন্ত বিলম্বে জমার সুযোগ দিয়ে আসছে।

ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া বলেন, 'আগে থেকে এ সুযোগ থাকায় আমাদের নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়নি।'

তবে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন বলেন, 'আমাদের ব্যাংকে ডিপিএস স্কিমের গ্রাহক কম, আমানতও কম। তারপরও প্রয়োজন হলে এসব আমানতকারীকে সুবিধা দেব।'

ব্যাংকে যাঁরা ডিপিএসের আওতায় সঞ্চয় করেন, তাঁদের বেশির ভাগই নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত। ব্যাংকগুলোতে ৫০০ টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত মাসিক জমা রাখা যায়। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে সুদসহ নিজের জমানো মিলিয়ে একসঙ্গে ভালো পরিমাণ টাকা পেতে মাসিক ভিত্তিতে এ সঞ্চয় করেন আমানতকারীরা। করোনার কারণে যাঁদের অনেকের আয় হয় কমে গেছে, নয়তো বন্ধ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকগুলো নিজেরাই এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। প্রয়োজন মনে করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে।

এদিকে পিপলস লিজিং, বিআইএফসি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এফএএস ফাইনান্সসহ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা জমা রেখে ফেরত পাচ্ছেনা আমানতকারীরা। তাদের নিয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন উদ্যোগ নেই। একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানাতকারী এ নিয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, টাকা ফেরত পেতে সরকারের উদ্যোগ চাইছেন।