ঢাকায় দোকানপাট খুলেছে, চলাচল বেড়েছে

সীমিত পরিসরে আজ থেকে খুলেছে মার্কেট ও দোকানপাট। মার্কেটে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। কিন্তু ক্রেতা নেই। হোসাফ কনভেনশন সেন্টার, ঢাকা, ১০ মে। ছবি: আবদুস সালাম
সীমিত পরিসরে আজ থেকে খুলেছে মার্কেট ও দোকানপাট। মার্কেটে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। কিন্তু ক্রেতা নেই। হোসাফ কনভেনশন সেন্টার, ঢাকা, ১০ মে। ছবি: আবদুস সালাম

রাজধানীতে জনপ্রিয় শপিং মলগুলো খোলেনি। তবে বড় শপিং মলের বাইরে ছোট ছোট মার্কেট ও বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ডের দোকান খুলেছে।

রাস্তায় মানুষের চলাচলও বেড়েছে। ব্যক্তিগত যানবাহন, মোটরসাইকেল, রিকশা ইত্যাদির চলাচল অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক বেশি দেখা গেছে।

আজ দুপুর ১২টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মিরপুরের কাজীপাড়া থেকে শুরু করে মিরপুর ১০ নম্বর, ২ নম্বর, ১ নম্বর, শেওড়াপাড়া, মহাখালী, বনানী, গুলশান, তেজগাঁও, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, নিউমার্কেট, মিরপুর রোড, ধানমন্ডি ইত্যাদি এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

দেশে গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সাধারণ ছুটির পর এসব বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধই ছিল। সরকার সীমিতভাবে খোলার সুযোগ দেওয়ায় আজ রোববার থেকে তা খুলেছে। অবশ্য বড় বড় বেশির ভাগ শপিং মল ও মার্কেট আগেই বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল।

সার্বিকভাবে বড় শপিং মল, ব্র্যান্ড শপ ও বড় দোকানে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। প্রথম দিন ক্রেতা ছিল একেবারেই কম। তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সুযোগ ছিল। বেশির ভাগ দোকানের কর্মচারীদের মাস্ক ও গ্লাভস পরতে দেখা যায়। শপিং মল ও ব্র্যান্ডের দোকানে ঢোকার সময় হাত ধোয়া অথবা জীবাণুনাশক ব্যবহার, জ্বর মাপা ও জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা যায়। ছোট দোকানে অনেক ক্ষেত্রেই এসব ব্যবস্থা ছিল না। বেশ কয়েকটি দোকানে ঢুকে দেখা গেছে, কোথাও কেউ পরিচয়পত্র দেখতে চায়নি।

মিরপুর ১০ নম্বরে শাহ আলী প্লাজা, ২ নম্বরে মিরপুর শপিং কমপ্লেক্স ও ১ নম্বরে মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্স খোলেনি। কিন্তু ১০ নম্বর থেকে ১ নম্বর পর্যন্ত রাস্তার পাশের পোশাকের দোকানগুলো খুলেছে। সেখানে কিছু কিছু ক্রেতাও দেখা গেছে।

আঙিনা মেগা মলের ব্যবস্থাপক জোবায়ের মাহমুদ বলেন, ‘প্রথম দিন আমরা তেমন কোনো ক্রেতা আশা করি না। অনেকেই খোঁজখবর নিয়ে তারপর আসবেন। দু-এক দিন যাওয়ার পর ক্রেতা কিছু বাড়তে পারে।’ তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের পোশাক নিতে ক্রেতা দেখছি। কারণ, বাচ্চা বড় হয়ে যাওয়ায় অনেককে বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে।’

মিরপুর ১ নম্বরে মিরপুর নিউমার্কেট নামে বড় একটি শপিং মল খোলা ছিল। সেখানে ঢোকার পথে জ্বর মাপা ও জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা যায় নিরাপত্তাকর্মীদের। কাছেই চিড়িয়াখানা সড়কে ঢোকার মুখে মাল্টিপ্ল্যান রেড ক্রিসেন্ট সিটিতে আড়ং, আর্টিসানসহ কয়েকটি ব্র্যান্ডের দোকান খোলা দেখা যায়। রাস্তার উল্টোদিকে ফ্যাশন ব্র্যান্ড ইয়োলোর বড় বিক্রয়কেন্দ্রটিও খুলেছে।

মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় শাহ আলী প্লাজা বন্ধ থাকলেও অন্যান্য দোকান খুলেছে। কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ায় খুলছে আসবাবের বিক্রয়কেন্দ্রগুলো। তাতে কোনো সুরক্ষাব্যবস্থা দেখা গেল না। কাজীপাড়ার এক আসবাবের দোকানের কর্মী জানন, চার ঘণ্টায় একজন ক্রেতাও আসেননি। কার জন্য সুরক্ষাব্যবস্থা রাখা হবে?

মহাখালীতেও দোকানপাট খুলেছে। বনানী ১১ নম্বর সড়কে খুলেছে পোশাক, জুতা ও অন্যান্য পণ্যের দোকান। আবার কিছু কিছু বন্ধও ছিল। বনানীর বাংলাদেশ ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্সের দোকান খুলেছে। গুলশান-১ ও ২ নম্বরে ডিসিসি মার্কেট খোলা রাখতে দেখা যায়। বন্ধ ছিল পিঙ্ক সিটি ও পুলিশ প্লাজার মতো বড় শপিং মল। তবে গুলশানের বিভিন্ন জায়গায় শপিং মলের বাইরের পোশাক, জুতা ও অন্যান্য পণ্যের দোকান খুলেছে।

ঘোষণা অনুযায়ী বসুন্ধরা সিটি বন্ধ ছিল। খোলা ছিল বসুন্ধরার সামনের জুতার দোকানগুলো। সায়েন্স ল্যাব থেকে ঢাকা কলেজের দিকে যেতে হাতের বাঁ পাশের বেশ কিছু দোকানপাট খোলা রাখতে দেখা যায়। কিন্তু বন্ধ ছিল ঢাকা কলেজের সামনের গ্লোব শপিং কমপ্লেক্স, বদরুদ্দোজা মার্কেট, নূরজাহান মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, গাউসিয়া, চাঁদনীচক ও নিউমার্কেট। খোলা ছিল নিউ সুপার মার্কেট।

মিরপুর রোডে রাপা প্লাজা, মেট্রো শপিং মল খোলেনি। খুলেছে সানরাইজ প্লাজা ও এআরএ সেন্টার শপিং মল।

আড়ং, অ্যাপেক্স, বাটা, ইয়োলো, ওরিয়ন, সারা, কে ক্র্যাফট ইত্যাদি ফ্যাশন ব্র্যান্ড, বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড, মুঠোফোনের দোকান ইত্যাদি খুলতে দেখা যায় রাজধানীজুড়ে।

আড়ংয়ের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, ‘খুব ভিড় হোক সেটা আমরা চাইনি। এ জন্য আগে অনলাইনে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ক্রেতাদের যে ধরনের সাড়া চেয়েছিলাম, সেটা পেয়েছি। এ জন্য আমরা সন্তুষ্ট। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনলাইনে নিবন্ধিত ক্রেতার আগে চলে আসার ঘটনা ঘটেছে।’