তিন-চার মাসে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে না

করোনার কোপে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এখন অবরুদ্ধ অবস্থা চলছে। মানুষের জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে প্রবাসী আয়, পণ্য রপ্তানি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে বিপদে আছে দেশ। পরিস্থিতি আরও নাজুক হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এমন ক্রান্তিকাল থেকে উত্তরণে সরকার বড় আকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় বেসরকারি খাতের নেতা, উদ্যোক্তা ও শীর্ষ নির্বাহীরা সন্তুষ্ট। তাঁরা মনে করেন, করোনার প্রভাব কাটাতে মানুষের জীবন-জীবিকা, ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, এসএমই খাত এবং কৃষি ও শিল্পের উৎপাদনশীলতায় জোর দিতে হবে। তাঁদের আশা, সম্মিলিত উদ্যোগে কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যবসা-বাণিজ্য আবার স্বাভাবিক হবে, অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবে।
মতিউর রহমান
চেয়ারম্যান 

উত্তরা মোটরস

আমার মনে হয়, এত দিন ব্যবসা-বাণিজ্যে একটা বিরতি গেছে। এখন বাজারকে গতিশীল করতে সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে। যখন দোকান খুলে দেওয়া হবে এবং কেনাবেচা শুরু হবে, তখন দেখা যাবে সবাই ক্রেতা আকর্ষণের জন্য নানা প্যাকেজ নিয়ে হাজির হচ্ছে। কেউ মূল্যছাড় দেবে, কেউ কিস্তিসহ অন্যান্য অফার দেবে। এতে ব্যবসার চাকাটি আবার সচল হবে।

আমার মনে হয়, ব্যবসা-বাণিজ্য আবার ঘুরে দাঁড়াবে। তবে হয়তো কয়েক মাস সময় লাগবে। আমি আশাবাদী, আমরা আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারব। একটা দিক হলো, কয়েক মাসে অনেকেই সঞ্চয়ের অর্থ খরচ করে ফেলবে। অনিশ্চয়তার কারণে কেউ কেউ কেনাকাটার ক্ষেত্রে সংযমী হতে পারে। আবার অনেকে প্রয়োজনের কারণেই কিনবে। বাড়তি আরেকটু বিক্রি হবে কোম্পানিগুলো মূল্যছাড়, কিস্তিসুবিধা ইত্যাদি সুযোগ দেওয়ার কারণে।

কয়েকটি কারণে আমি ব্যবসা-বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে আশাবাদী। এত দিন মানুষ কোনো কেনাকাটা করতে পারেনি। দোকানপাট খুললে একটা চাপ তৈরি হবে। এত দিন পরিবেশক ও সরবরাহ পর্যায়ে যুক্তরাও পণ্য নিতে পারেননি। তাঁরা যখন ক্রয়াদেশ দেওয়া শুরু করবেন, তখন কোম্পানিগুলোর বিক্রি বাড়বে। কোম্পানি থেকে পরিবেশক, পরিবেশক থেকে উপপরিবেশক, উপপরিবেশক থেকে খুচরা ক্রেতা পর্যায়ে লেনদেন চালু হবে।

সরকার বিপুল অঙ্কের অর্থ প্রণোদনা হিসেবে দিচ্ছে। এ টাকা বাজারে ঘুরবে। এর ফলে বেচাকেনা বাড়বে, চাহিদা বাড়বে। এখন দরকার সরকারি প্রণোদনার টাকা দ্রুত ছাড় করা। সব মিলিয়ে আমি মনে করছি, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কেটে গেলে কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হবে। যদিও কোম্পানিগুলোর লোকসান কাটাতে অনেক সময় লাগবে, সেটা ভিন্ন দিক। কিন্তু পণ্য বেচাকেনা স্থবির থাকবে, সেটা আমি মনে করি না।

আমি কোনোভাবেই মনে করি না যে তিন-চার মাস বেচাকেনা বন্ধ থাকলেই আমাদের ব্যবসাও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। অথবা টিকে থাকাই কষ্টকর হবে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে মানুষের আয় কমে যায়। ফলে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার ওপর বেশি জোর দেয়। গাড়ি, মোটরসাইকেলের মতো বিলাস ও দামি পণ্যের বিক্রিতে ভাটা পড়ে। তবে করোনাভাইরাস ভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে আসতে পারে। গণপরিবহনে ভিড় এড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে মানুষ মোটরসাইকেল কিনতে পারে। ফলে আমরা ভালো দিকই দেখছি।

ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আমরা সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছি। আমরা কর্মীদের তিন মাসের বেতন দিতে ২ শতাংশ সুদে ৬০ কোটি টাকা এবং চলতি মূলধন হিসেবে ৪ শতাংশ সুদে ২ হাজার কোটি টাকার তহবিল চেয়েছি।

আমাদের আরেকটি প্রস্তাব হলো, মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ব্যয় কমানো। এখন একটি মোটরসাইকেল নিবন্ধনে মোট দামের ২৫ শতাংশের সমপরিমাণ ব্যয় হয়। গড়ে যা ২২ হাজার টাকা। এটা ৪ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা উচিত। এতে মোটরসাইকেল সহজলভ্য হবে।