একেকটি দিন যাচ্ছে আর ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে

করোনার কোপে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এখন অবরুদ্ধ অবস্থা চলছে। মানুষের জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে প্রবাসী আয়, পণ্য রপ্তানি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে বিপদে আছে দেশ। পরিস্থিতি আরও নাজুক হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এমন ক্রান্তিকাল থেকে উত্তরণে সরকার বড় আকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় বেসরকারি খাতের নেতা, উদ্যোক্তা ও শীর্ষ নির্বাহীরা সন্তুষ্ট। তাঁরা মনে করেন, করোনার প্রভাব কাটাতে মানুষের জীবন-জীবিকা, ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, এসএমই খাত এবং কৃষি ও শিল্পের উৎপাদনশীলতায় জোর দিতে হবে। তাঁদের আশা, সম্মিলিত উদ্যোগে কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যবসা-বাণিজ্য আবার স্বাভাবিক হবে, অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবে।

এ কে আজাদ

কর্ণধার, হা-মীম গ্রুপ;
সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই

আমরা ক্ষতির মধ্যে ঢুকে গেছি। একটি করে দিন যাচ্ছে, আর আমাদের ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। রপ্তানি, কৃষি, সেবা—সব খাতই স্থবির হয়ে গেছে। এক করোনাভাইরাসের কারণে গোটা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশও এখন অবরুদ্ধ (লকডাউন) অবস্থায় রয়েছে। 

 রপ্তানি খাতের কথা যদি বলি, বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে একের পর এক পণ্য রপ্তানির আদেশ বাতিল হচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদে তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দেবে। অন্তত অর্ধেক হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা হচ্ছে। শুধু পোশাক নয়, পাট ও পাটজাত এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিও মার খাচ্ছে। 

 এদিকে আমাদের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত হচ্ছে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স)। মধ্যপ্রাচ্য থেকে এই অবস্থায়ও শ্রমিকেরা ফেরত আসতে বাধ্য হচ্ছেন। পত্রপত্রিকায় যা দেখতে পাচ্ছি, কাতারে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা খাবারই পাচ্ছেন না। 

 অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যও এখন বিপদের মুখে। বিশেষজ্ঞদের মুখ থেকে যা শুনি সেটা হচ্ছে, করোনার কারণে যত না মানুষ মারা যাবে, তার চেয়ে বেশি মারা যাবে দুর্ভিক্ষের কারণে। 

 আমাদের সরকার বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে শুরু থেকেই নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিক জায়গায় ফিরে আসার জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছে। দরিদ্র ও অতি দরিদ্রদের নিত্যপণ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিতরণ ব্যবস্থায় কিছুটা ত্রুটি আছে যদিও। 

 প্রশ্ন হচ্ছে, লকডাউন কত দিন রাখা হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আংশিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত দিয়ে ভালো করেছেন। কারণ, পুরো লকডাউন যুক্তরাষ্ট্র পারেনি, পাকিস্তানও পারেনি। আর দুই থেকে তিন মাস এ অবস্থা থাকলে বিপদ কোথায় গিয়ে ঠেকবে, অনুমান করাও কঠিন। যেহেতু কোভিড- ১৯কে আমরা ডেকে নিয়ে আসিনি, সুতরাং তা কবে যাবে সেই অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। তাহলে আমরা কি বসে থাকব? না। স্বাস্থ্য খাতের দিকটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি হাসপাতালগুলো একা কুলাতে পারছে না, কোভিডের চিকিৎসা বেসরকারি হাসপাতালগুলো পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে হবে। এ জন্য তাদের সুবিধা দিতে হবে। 

 তবে কোভিড যে শিক্ষা দিয়েছে, তাতে মনে হয়, স্বাস্থ্য খাতের দিকে সরকারের অনেক বেশি নজর দিতে হবে। পুরো স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। যতটুকু শুনেছি, এ খাতে যত বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা আবার পুরোপুরি খরচ হয় না। তবে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে খাদ্য বিষয়ে। সরকারি গুদামে ভালো মজুত থাকা উচিত। আইনের শাসনের বিকল্প নেই। আর ব্যাংক খাতের কথা যদি বলি, ২০ থেকে ২৫ শতাংশ খেলাপি ঋণ। এর মধ্যে দুই মাসের সুদ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তে ব্যাংকগুলোর আয় কমবে ​১৪ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ যাতে আর না বাড়ে, এ জন্য নজরদারি বাড়ানো জরুরি। ​‘দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন’ নীতিই হতে পারে এ ব্যাপারে সেরা নীতি।