করোনায় নতুন খেল দেখাল ইতালির চাল

করোনার সময়ে ইতালিকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে ধান চাষ। ছবি: এএফপি
করোনার সময়ে ইতালিকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে ধান চাষ। ছবি: এএফপি

করোনা পরিস্থিতিতে নতুন নতুন কত কিছুই না দেখছে দুনিয়ার মানুষ। এবার খেল দেখাল ইতালির চাল। ইতালি ইউরোপে সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদনকারী দেশ হলেও সে দেশে পাস্তাই বেশি জনপ্রিয়। তবে করোনা মহামারির এই সময়ে দেশটিতে ভাত খাওয়ার পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে তা পাস্তাকে ছাড়িয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, এ চাল নিতে ইতালির সঙ্গে চুক্তি করেছে চীন।

ইতালির চালের বৈদেশিক চাহিদাও বেড়েছে, যা করোনা মহামারির মতো এই দুর্যোগেও কিছুটা নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে কৃষকদের।

এএফপির খবরে জানানো হয়, ইতালির চালের কেবল অভ্যন্তরীণ চাহিদাই বাড়েনি, চীন সাগ্রহে এই চাল নিতে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। গত এপ্রিলে এ চুক্তিটি হয়। ইতালির রিসোটো ডিশের প্রতি আগ্রহ আছে চীনাদের।

ইতালির পাভিয়া প্রদেশের প্রেসিডেন্ট স্টেফানো গ্রেপি বলেন, ‘চীনের চাষাবাদ করা ধানের চেয়ে আমাদের ধানের মান ভালো।’ পাভিয়া প্রদেশে ইতালির প্রধান কৃষি ইউনিয়ন রয়েছে। একটি কৃষি ফার্মের মালিক গ্রেপি বলেন, মহামারির এই সময়ে চীনের সঙ্গে চুক্তিতে তাঁরা খুশি।

ইউরোপের মোট চাল উৎপাদনের অর্ধেকই করে ইতালি। এপ্রিলে করা ওই চুক্তি অনুযায়ী, চীনে এখন চাল রপ্তানি করবে তারা। এটা পাভিয়া, লম্বারদি, ভারসেলি, নোভারা প্রদেশগুলোর জন্য খুবই খুশির খবর। এই প্রদেশগুলোতেই ইতালির ৯৫ শতাংশ চালের উৎপাদন হয়।

চুক্তির পর ইতালির বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, পাভিয়ার আশপাশের গ্রামাঞ্চলে চাষ করা ধানের (এবং রিসোটো) জন্য বিশাল চীনের বাজারের দরজা উন্মুক্ত হচ্ছে। এটি কিছুটা এস্কিমোদের জন্য আইসক্রিম বিক্রি করার মতো। বলা হয়, ইতালির অনুকরণে চীন নিজেদের মতো করে রিসোটো ডিশ তৈরি করে।

ইতালিতে প্রায় ৪ হাজার ২০০ জন ধান উৎপাদনকারী ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করেন। বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদন হয় দেশটিতে। প্রায় ২০০ ধরনের চাল উৎপাদন হয়। প্রতিটির রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। যদিও বৈশ্বিক চাল উৎপাদনে ইউরোপের অংশ খুব বেশি নয়। বিশ্বের মোট চাল উৎপাদনের মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ হয় ইউরোপে। বিশ্বে বছরে প্রায় ৫০ কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়, যার ৯০ শতাংশই এশিয়াভিত্তিক।

শুধু চীনে নয়, অভ্যন্তরীণ চালের চাহিদাও বেড়েছে ইতালিতে। করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম ৬ সপ্তাহেই চালের চাহিদা ৪৭ শতাংশ বেড়ে যায় দেশটিতে। এমনকি ওই সময় পাস্তার চেয়ে চালের চাহিদা বেড়ে যায়।
লম্বারদির এক কৃষক জানান, কোভিড–১৯-এর জরুরি সময়ে চাল ও চালের তৈরি রিসোটো নতুন করে কদর পায় মানুষের কাছে। আগে এগুলোর এতটা চাহিদা ছিল না।

একই অঞ্চলের কৃষক সেরজিও লম্বারদি (৬৩) বলেন, এ অঞ্চলে পানির মজুত ও ধান চাষের সময়কালের একটি ভালো যোগসূত্র রয়েছে, যা ইতালির অনেক অঞ্চলে নেই। বসন্তে রোপণ করা হয়। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে ইতালিতে ধান কাটা হয়।