দেশে জ্বালানির মজুত উপচে পড়ার মতো

প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স
প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স

চাহিদা কমে যাওয়ায় দেশে ডিজেল, জেট ফুয়েল ও ফার্নেস অয়েল—এই তিন শ্রেণির জ্বালানির মজুত উপচে পড়ার মতো অবস্থা হয়েছে। এ কারণে ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরেও চট্টগ্রাম বন্দরমুখী জ্বালানিবাহী তিনটি জাহাজের নোঙর করার সময় এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। জ্বালানিবাহী আরও দুটি জাহাজের বন্দরে আসা পিছিয়ে দিতে দেনদরবার চলছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বা বিপিসি সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী জ্বালানির চাহিদা তলানিতে নেমে আসে। কারণ, পণ্যবাহী ছাড়া প্রায় সব ধরনের যান ও শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় চাহিদা অস্বাভাবিক কমেছে। এ কারণে বেড়ে গেছে তেলের মজুত।

বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মুস্তফা কুদরত-ই ইলাহী প্রথম আলোকে বলেন, রিজার্ভারে ধারণক্ষমতার বেশি জ্বালানি এই মুহূর্তে আছে। যদিও মে মাস থেকে ডিজেল ও জেট ফুয়েলের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে। সেই তুলনায় ছোট গাড়ির জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে না।

বিপিসি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ প্রধানত জ্বালানি তেল আমদানি করে সিঙ্গাপুর ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। চলতি মাসে জ্বালানি তেল নিয়ে ১০টি জাহাজ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। প্রতিটি জাহাজে জ্বালানি আমদানি হয় ৩০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে পাঁচ জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে ভিড়ে পর্যায়ক্রমে খালাস শুরু করেছে।

প্রসঙ্গত, জ্বালানি তেল আমদানি হয় মেট্রিক টন হিসাবে। আর অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রির একক লিটার।

বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (ফাইন্যান্স) মনিলাল দাশ এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাহিদা পূরণের জন্য তিন লাখ মেট্রিক টন জ্বালানির ঋণপত্র খোলা হয়। মে মাসে ১০ জাহাজে করে এই জ্বালানি বন্দরে ভেড়ার কথা। কিন্তু চাহিদা কমে যাওয়ায় তিন জাহাজ জ্বালানি আমরা মে মাসে গ্রহণ করছি না। কারণ, তেল রাখার জায়গা আমাদের নেই।’

জ্বালানি নীতিমালা অনুযায়ী, দেশে কমপক্ষে ৬০ দিনের তেল মজুত থাকার কথা। কিন্তু দেশের রিজার্ভারগুলোতে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের জ্বালানি মজুত রাখা সম্ভব। যদিও সরকার মজুত ক্ষমতা বাড়াতে মহেশখালীসহ কয়েকটি স্থানে রিজার্ভার তৈরি করছে।

বিপিসি সূত্র জানায়, ৫ মে পর্যন্ত দেশে ডিজেলের মজুত (রিজার্ভার ও জাহাজে থাকা মিলিয়ে) ছিল ৬ লাখ ৮২ হাজার মেট্রিক টন। অথচ ধারণক্ষমতা ৬ লাখ ৩১ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন। একইভাবে উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েল প্রায় ৭০ হাজার এবং ফার্নেস অয়েল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন মজুত আছে। যদিও এই দুটি শ্রেণির জ্বালানির ধারণক্ষমতা যথাক্রমে ৬৫ হাজার ৮৫৮ এবং ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং শিল্পকারখানায় ফার্নেস অয়েল ব্যবহৃত হয়।

বিপিসি সূত্র জানায়, ছোট গাড়ির জ্বালানি অকটেন ও পেট্রলের জোগান আসে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডের ‘কনডেনসেট’ থেকে। জ্বালানির এই উপজাত পরিশোধন করে পাওয়া যায় অকটেন ও পেট্রল। এই দুই শ্রেণির জ্বালানির মজুত পর্যাপ্ত আছে দেশে। আর গ্রামগঞ্জে কুপি বাতিতে ব্যবহার হয় কেরোসিনের। কেরোসিনের মজুতও পর্যাপ্ত আছে।

করোনাভাইরাসের কারণে দেশে এপ্রিল থেকে সব শ্রেণির জ্বালানির কম ব্যবহার হচ্ছে। পণ্যবাহী গাড়ির চলাচল অব্যাহত থাকা এবং সেচপাম্প চালু থাকায় ডিজেলের ব্যবহার মোটামুটি হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ডিজেল ব্যবহৃত হয় ১ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন। গত বছরের এপ্রিলে ডিজেল ব্যবহৃত হয়েছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের প্রভাবে ১ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল কম ব্যবহৃত হয়েছে।

বিপিসি সূত্র জানায়, দেশে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বেড়েছে। আন্তর্জাতিক রুটের কিছু উড়োজাহাজও চলছে। এ কারণে ডিজেল ও জেট ফুয়েলের চাহিদা বাড়ছে। যেমন ৫ মে ১৪ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন ডিজেল এবং ৩৪০ মেট্রিক টন জেট ফুয়েল বিক্রি হয়েছে, যা প্রায় স্বাভাবিক সময়ের চাহিদার কাছাকাছি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার প্রভাব দেড় থেকে দুই বছর থাকবে। এই সময়ে চাহিদাও কম থাকবে। কিন্তু আমরা জ্বালানি থেকে কোনো সুবিধা নিতে পারছি কি না, তা দেখতে হবে। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে এটির দাম ছয়-সাত মাস আগে থেকে কমে আসছে। এখন আরও কমেছে।’