গ্রামীণফোনের পদক্ষেপ মূল্যযুদ্ধের উদাহরণ: রবি

মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের একটি পদক্ষেপকে ‘মূল্যযুদ্ধের উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে আরেক অপারেটর রবি আজিয়াটা। রবির অভিযোগ, গ্রামীণফোন বাজারভিত্তিক পদক্ষেপকে করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর মোড়কে উপস্থাপন করায় প্রতিযোগিতার ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

আজ সোমবার এক ডিজিটাল সংবাদ সম্মেলনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতিতে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা বিস্তারিত তুলে ধরতে গিয়ে রবির পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ করা হয়। 


এতে বিস্তারিত তুলে ধরেন রবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। এ সময় রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলমসহ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনের পর এক বিজ্ঞপ্তিতে রবি বলেছে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সমাজের সবার পাশে দাঁড়াতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা জানাচ্ছে। রবির স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে, বাজারমুখী পদক্ষেপ আর করপোরেট দায়বদ্ধতা–সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপকে এক করে ফেলার সুযোগ নেই। অবশ্য কোথাও গ্রামীণফোনের নাম উল্লেখ করা হয়নি। বদলে ‘মার্কেট লিডার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। দেশে সাড়ে ৭ কোটি গ্রাহক নিয়ে গ্রামীণফোনই ‘মার্কেট লিডার’। রবির গ্রাহক ৪ কোটি ৯৬ লাখ।

গ্রামীণফোন ৯ মে জানায়, তারা ১ কোটি গ্রাহকের জন্য ১০ কোটি মিনিট বিনা মূল্যে দিচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্ধারিত ২৫ হাজার করোনা চিকিৎসকের জন্য তারা ১ টাকার বিনিময়ে মাসে ৩০ গিগাবাইট (জিবি) ইন্টারনেট দেবে ছয় মাস ধরে। নিজেদের সব গ্রাহকের (প্রায় সাড়ে ৭ কোটি) জন্য তারা সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রতি মিনিট ৪৮ পয়সা কলরেটে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য ১০ কোটি টাকার নিরাপত্তামূলক ঋণ কর্মসূচি বা ক্রেডিট স্কিম নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

রবির মাহতাব উদ্দিন বলেন, বাজার ও টেকসই পদক্ষেপ মিলিয়ে করোনা মোকাবিলায় রবি ইতিমধ্যে ১৭০ কোটি টাকা (৯০ কোটি টাকা পুরোপুরি সিএসআর ও টেকসই পদক্ষেপে এবং বাকি ৮০ কোটি টাকা বিপণন–সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপে) ব্যয় করেছে। কিন্তু তাঁর মতে, টাকার অঙ্কটা বড় ব্যাপার নয়, বরং রবি এই মহামারির শেষ পর্যন্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

রবির বক্তব্য হলো, যদিও দুটি বিষয়ই করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু দুটি বিষয় দুই ধারায় কার্যকর। তাই কোম্পানি একে এক করে দেখতে রাজি নয়। বাজার–সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপের সঙ্গে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের বিষয়টি জড়িয়ে আছে। কিন্তু টেকসই পদক্ষেপগুলো শুধুই সমাজের দিকে তাকিয়ে নেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মাহতাব উদ্দিন বলেন, এখন দৈনিক রাজস্ব ৪ কোটি টাকা কম হওয়ার পরও রবি নির্দিষ্ট প্যাকগুলোতে ডেটার দাম ৬০ শতাংশের মতো কমিয়ে এনেছে। কথা বলা বা ভয়েসের ক্ষেত্রেও যথাসম্ভব কমানো হয়েছে।

রবির সিইও মার্কেট লিডারের আগ্রাসী পদক্ষেপের হাত থেকে ছোট প্রতিযোগীদের রক্ষা করতে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। কারণ, তিনি মনে করছেন, মার্কেট লিডার তাদের বাজারভিত্তিক পদক্ষেপকে সিএসআরের মোড়কে উপস্থাপন করায় প্রতিযোগিতার ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের মতো সামর্থ্যবান গ্রাহকদের জন্য মার্কেট লিডারের মাত্র ১ টাকায় ৩০ জিবি ডেটা দেওয়ার মতো অফারগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনুমোদন দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন মাহতাব। তিনি অভিযোগ করেন, মার্কেট লিডার কোভিড-১৯–এর সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজার কুক্ষিগত করছে। মার্কেট লিডারের দেওয়া ওই অফারটিকে তিনি মূল্যযুদ্ধের প্রকৃষ্ট উদাহণ হিসেবে তুলে ধরেন।

রবিও যাঁরা নিয়মিত রিচার্জ করতেন, কিন্তু করোনাসংকটের কারণে করতে পারছেন না, তাঁদের জন্য বিনা মূল্যে ১০ মিনিট টকটাইম ও ৫০ এমবি ডেটা দিচ্ছে। এ ছাড়া রবি বিক্রয় ও পরিবেশক পর্যায়ের কর্মীদের জন্য খাবার সরবরাহ, আর্থিক সহায়তা, স্বাস্থ্য বীমাসহ সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

রবির সিইও বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি মার্কেট লিডারকে সুশৃঙ্খলভাবে চলার জন্য পদক্ষেপ না নেয়, তবে তারা কোভিড-১৯ সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সেনা কল্যাণ সংস্থার সহযোগিতায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১০ হাজার পরিবারের মধ্যে খাবার বিতরণ করবে রবি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের জনসমাগমস্থলগুলোতে জীবাণুমুক্তকরণ বুথ স্থাপন করা হবে।

এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন মুহাম্মদ হাসান বলেন, ‘এই ভয়াবহ সংকটে সবাই মিলে দেশের পাশে দাঁড়ানো এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এবং এ জন্য সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। এটা দুঃখজনক যে এমন মন্তব্য করা হয়েছে। তবে আমরা সাধুবাদ জানাই যে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অনেকেই উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসছে।’