বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে চীনা বিনিয়োগ কমেছে যুক্তরাষ্ট্রে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রে চীনের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে। চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণেই মূলত এমনটা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সোমবার প্রতিবেদনটি মার্কিন সংবাদপত্র ইউএএসএ টুডেতে প্রকাশিত হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীনা পণ্য আমদানির ওপর ব্যাপক হারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জবাবে চীন সরকারও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন পণ্যে এবং সেই দেশে নিজেদের বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর প্রভাব পড়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনা এফডিআইয়ের ওপর।

যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর চীনা এফডিআই কমে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারে নেমেছে। এটি আগের বছরের চেয়ে ৪০ কোটি ডলার কম এবং ২০০৯ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পরে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বনিম্ন পরিমাণ চীনা এফডিআই। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে চীন থেকে মোট ৫৪০ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। ন্যাশনাল কমিটি অন ইউএস-চায়না রিলেশনস ও রোহ্ডিয়াম গ্রুপ কনসালট্যান্সি গতকাল সোমবার এসব তথ্য প্রকাশ করেছে।

চীন থেকে বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার সময়ও যুক্তরাষ্ট্রে চীনা এফডিআই কমেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে, অর্থাৎ, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা বিনিয়োগ ২০ কোটি ডলার কমেছে। চীন থেকেই কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

চীনে কিন্তু মার্কিন এফডিআই বেড়েছে। চীন গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে, যা আগের বছর ছিল ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। তার মানে, এক বছরে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ১০০ কোটি ডলার কমেছে। অবশ্য মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি তেসলার সাংহাইয়ে কারখানা স্থাপনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পূর্বঘোষিত প্রতিশ্রুতির ফলেই চীনে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বেড়েছে।

বিনিয়োগ-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অভিযোগ রয়েছে। যেমন চীন নিজেদের স্বার্থ হাসিলে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে তাদের বাণিজ্য সফলতার গোপন কথা বলতে বাধ্য করা এবং তথ্য চুরিসহ নানা অপকৌশল প্রয়োগ করে থাকে। আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রাধান্য কমিয়ে নিজেরা ওপরে উঠতে চীন এমন কাজ করে থাকে।

চীনা পণ্য আমদানির ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সর্বমোট ৩৬ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। চীনও যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দিতে ছাড়েনি। তারা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ব্যাপকহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ রকম এক বাণিজ্যযুদ্ধের পরিস্থিতিতে অবশ্য গত জানুয়ারি মাসে দুই দেশ পারস্পরিক উত্তেজনা কমাতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করে। কিন্তু সেই চুক্তির ফল পাওয়ার আগেই চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং অচিরেই তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী ১৮৭টি দেশ এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে।