শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থায় খায়রুল যুগের অবসান হতে যাচ্ছে

টানা ৯ বছর পার হওয়ার পর পুঁজিবাজারে এম খায়রুল হোসেন যুগের অবসান হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিদায়ী চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বিএসইসিতে এসেছিলেন। খায়রুল হোসেনের বিভাগ ছিল ফিন্যান্স। বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার। এ ছাড়া কমিশনের মোট চার কমিশনারের মধ্যে বর্তমানে পদে আছেন মাত্র একজন। বাকি তিন কমিশনারের পদই শূন্য। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিএসইসির চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনার নিয়োগের ব্যাপারে ১০ জনের নামের একটি তালিকা করেছে।

সূত্রগুলো জানায়, কমিশনার পদে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের আরেক শিক্ষক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক এক অতিরিক্ত সচিব এবং ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনটেন্টস বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি ছিলেন-এমন তিনজনের নাম রয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে তালিকাটি সার-সংক্ষেপ আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী অনুমোদন করে দিলেই তা চলে যাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমোদন দিলে তা ফিরে আসবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। এর পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ শাখা তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করবে।

জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন হওয়ার আগ পর্যন্ত এ নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাচ্ছেন না। তবে বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরই নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনারেরা যোগ দিতে পারবেন-সেভাবেই কাজ এগোচ্ছে বলে জানান তিনি।

বিএসইসিতে তিন দফায় ৯ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব রয়েছেন এম খায়রুল হোসেন। ২০১০ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির পর পুনর্গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ২০১১ সালের ১৫ মে তিনি নিয়োগ পান। প্রথম দফায় তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় তাঁকে। এর পর দ্বিতীয় মেয়াদে চার বছর এবং সর্বশেষ আইন লঙ্ঘন করে তৃতীয় দফায় দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। একইভাবে ৯ বছর দায়িত্ব পালন করে গেছেন কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামীও।

সূত্রগুলো জানায়, খায়রুল হোসেনের শেষ বারের নিয়োগটি হয় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে অন্ধকারে রেখে। আবদুল মুহিত তখন দেশে ছিলেন না। বিষয়টি জানত না এমনকি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগও। এই সুযোগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় খায়রুল হোসেনকে তৃতীয় বারের মতো নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন আপলোড করে দেয় ওয়েবসাইটে, যা প্রথম আলো ডাউনলোড করে রাখে।
কিন্তু চেয়ারম্যানের নিয়োগ নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠলে একদিনের মধ্যেই ওয়েবসাইট থেকে ওই প্রজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলা হয়।

দেশে ফিরে বিএসইসি চেয়ারম্যানের এভাবে নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খোদ তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ নিয়োগ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এ নিয়ে চার মাস চিঠি চালাচালিও চলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ও কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন খায়রুল হোসেন ও হেলাল উদ্দিন নিজামী।
বর্তমানে বিএসইসিতে চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের পাশাপাশি কমিশনার খন্দকার কামালুজ্জামান দায়িত্বে রয়েছেন। ফলে কোরাম সংকটে রয়েছে বিএসইসি।

জানা গেছে, খায়রুল হোসেন এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে চলে যাবেন। আর হেলালউদ্দিন নিজামী চলে যাবেন তাঁর মূল জায়গা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগে।


জানতে চাইলে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম গতকাল সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কোনো চিঠি পাননি। তাই এ পর্যায়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না।