জামানতবিহীন ঋণ চান ই-কমার্স উদ্যোক্তারা

করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে জামানতবিহীন ঋণ দাবি করছেন ই-কমার্স উদ্যোক্তারা। একই সঙ্গে তাঁরা ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট কর ও ভ্যাট থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন।

ই-কমার্স উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনার সময় ই-কমার্সের মাধ্যমে ওষুধ, মুদি ও কিছু নিত্যপণ্য বিক্রি ব্যাপক হারে বেড়েছে। তবে সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এই পণ্যগুলো বিক্রি করে না। মূলত ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ই-কমার্স অঘোষিত লকডাউনে সেবা দিয়েছে। বাকি ৮৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখতে ঋণ সহায়তা বেশি প্রয়োজন।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) যৌথভাবে আয়োজিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে আজ বুধবার এই দাবি করেন উদ্যোক্তারা। এতে অংশ নেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ই-ক্যাবের উপদেষ্টা নাহিম রাজ্জাক ও সভাপতি শমী কায়সার প্রমুখ।

ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমালের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ই-ক্যাবের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল হক। তিনি বলেন, বর্তমানে ই-ক্যাবের সদস্য ১ হাজার ২০০ উদ্যোক্তা। দেশে ই-কমার্সের বাজার প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। ১ লাখ ২৫ হাজার কর্মী এই খাতে কাজ করেন, যার মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী ও ৭৪ শতাংশ পুরুষ। সারা দেশের প্রায় ৮০ হাজার পরিবার প্রতিদিন ই-কমার্সের শপ থেকে সেবা নেন।

মোহাম্মদ আবদুল হক জানান, করোনায় ই-কমার্স খাতে ক্ষতি মাসিক প্রায় ৬৬৬ কোটি টাকা। বর্তমানে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সেবা প্রদান করছে। ৮৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই বন্ধ রয়েছে।

ই-ক্যাবের সভাপতি শমি কায়সার বলেন, করোনায় ১০০ থেকে ১৫০টি প্রতিষ্ঠান সেবা দিচ্ছে। ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাত ১০টা পর্যন্ত সরবরাহকারীরা যেন কাজ করতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতিসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ই-কমার্সে পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন শমি কায়সার। তিনি বলেন, ই-কমার্সকে আলাদা খাত হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কয়েক বছরের জন্য করপোরেট কর মওকুফ করা দরকার। অনলাইন ব্যবসার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া ২ শতাংশ সুদে উদ্যোক্তাদের জন্য জামানতবিহীন ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, সরকার এসএমই খাতের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। তবে এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত জামানত দিতে পারে না বলে ব্যাংকগুলো দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। আমরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। স্থানীয় চেম্বার বা ব্যবসায়িক সংগঠনকে ঋণ প্রদানপ্রক্রিয়ায় যুক্ত করছি। আশা করছি, ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।

বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীন বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০০ জন ই-কমার্স উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এটি সফল হলে ১২ হাজার উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তা ছাড়া প্রকল্পের অধীনে একটি মার্কেট প্লেস করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের সময় ই-কমার্সের প্রয়োজন গভীরভাবে অনুভব করা গেছে। মানুষকে ঘরে রাখার চিন্তাভাবনা ই-কমার্সের জন্য সম্ভব হয়েছে। উদ্যোক্তারা যেসব সমস্যার কথা বলেছেন, সেগুলো লিখিত আকারে দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, পণ্যের গুণগত মান রক্ষা করতে হবে। করোনার এই দুর্যোগের সময় ই-কমার্স বাণিজ্য প্রসারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে।

আরও বক্তব্য দেন চালডাল ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়া আশরাফ, ফুড পান্ডার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমব্রিন রেজা, ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল, সিন্দাবাদ ডট কমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান কিংশুক হক প্রমুখ।