বন্দরে ছাড় পাচ্ছেন না গাড়ি ব্যবসায়ীরা

বন্দরে গাড়ির জট। ছবি: সৌরভ দাশ
বন্দরে গাড়ির জট। ছবি: সৌরভ দাশ

করোনা পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা সব ধরণের আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার রাখার ভাড়া দেড় মাসের বেশি সময় ধরে ছাড় দিয়ে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আমদানিকারকেরা যাতে ক্ষতির মুখে না পড়েন সে জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এই সুবিধা দিয়েছে। সব ধরনের ব্যবসায়ীরাই এই সুবিধা পাচ্ছেন, পাচ্ছেন না শুধু গাড়ির আমদানিকারকেরা।

মোংলা বন্দরে অবশ্য কনটেইনারে যেমন ছাড় নেই, তেমনি গাড়িতে নেই। এই বন্দর দিয়ে সমুদ্রপথে দেশের মাত্র দুই শতাংশ পণ্যবাহী কনটেইনার আমদানি হয়। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি করা হয় বেশি।

সব ব্যবসায়ী ছাড় পেলে গাড়ি আমদানিকারকেরা কেন ছাড় পাবেন না? প্রশ্ন করা হলে দুই বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারমানই বলেছেন, এটা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত।

গাড়ি ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে গত দেড় মাস ধরে দেশের প্রায় সব গাড়ির শোরুম বন্ধ। গাড়ি বেচাকেনাও নেই। বিক্রি বন্ধ থাকায় শুল্ক কর পরিশোধ করে বন্দর থেকে গাড়ি খালাস করার সক্ষমতাও নেই ব্যবসায়ীদের। এতে চট্টগ্রাম ও মোংলা – দুই বন্দরে এখন প্রায় সাড়ে সাত হাজারের বেশি গাড়ি আটকা পড়েছে। এসব গাড়ি আমদানি করেছেন পুরনো গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডার সদস্যরা।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একজন ঢাকার ধানমন্ডির ডি অটোস প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আহসান শহীদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিমাসে ৫০–৬০টি গাড়ি বিক্রি হতো তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে। এখন দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে শোরুম। এ কারণে মোংলা বন্দরে তাঁর প্রতিষ্ঠানের আটকা পড়েছে ১২৮ টি গাড়ি। আবার গাড়ি নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষের অফিস বন্ধ থাকায় নিবন্ধনও হচ্ছে না, তাতে ব্যাংকের অর্থায়নও আটকে গেছে।

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে জাহাজ থেকে নামানোর পর চারদিন পর্যন্ত গাড়ি রাখার ভাড়া দিতে হয় না। এরপর প্রথম সপ্তাহ, দ্বিতীয় সপ্তাহ এবং পরবর্তী সময়ের জন্য প্রতিদিন–এই তিন স্তরে টন হিসেবে ভাড়া আদায় করে দুই বন্দর কর্তৃপক্ষ । এই তিন স্তরে চট্টগ্রাম বন্দর আদায় করে যথাক্রমে ৯৮ টাকা ৪০ পয়সা, ২৪৬ টাকা এবং ৩৯৩ টাকা করে।

আর মোংলা বন্দর তিন স্তরে আদায় করে যথাক্রমে ২৮ টাকা ৩৫ পয়সা, ৮০ টাকা ৭১ পয়সা এবং ১২৯ টাকা করে।
প্রতিটি গাড়ির ন্যূনতম ওজন দুই টন। এ হিসেবে সর্বশেষ ধাপে প্রতিটি গাড়ি রাখার ভাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে ৭৮৬ টাকা এবং মোংলা বন্দরে ২৫৮ টাকা ৫৮ পয়সা করে ভাড়া আসে। দুই বন্দরে থাকা গাড়িগুলোর প্রতিদিন ভাড়া আসছে প্রায় ৩০ লাখ টাকার বেশি।

বন্দরে ঢোকার মুখে গাড়ির জট। ছবি: সৌরভ দাশ
বন্দরে ঢোকার মুখে গাড়ির জট। ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনারের ভাড়া মওকুফ করায় এ পর্যন্ত প্র্রায় শত কোটি টাকার বেশি ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে বন্দর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই সুবিধা পেয়েছেন রপ্তানিমুখী শিল্প থেকে বাণিজ্যিক আমদানিকারকেরা–সবাই। কনটেইনারের বাইরে যেসব পণ্য বন্দরে রাখা হয় তার শীর্ষে রয়েছে গাড়ি।

গাড়ি আমদানিকারকেরা কেন ছাড় পাবেন না জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, কনটেইনার বেশি জমে যাওয়ায় তা খালাস করার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে কনটেইনার রাখার ভাড়া মওকুফ করা হয়েছে। গাড়ির ক্ষেত্রে সেটা করা হয়নি। তিনি বলেন, গাড়ির কারণে বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমে যেহেতু সমস্যা হয়নি সেজন্য ছাড় দেওয়ার বিষয়টি এতদিন আসেনি। আসলে, ছাড় দেওয়ার বিষয়টি সরকারি সিদ্ধান্তের।

মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের ছাড় দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এটি সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের চেয়ে মোংলায় গাড়ি রাখার ভাড়া প্রায় অর্ধেক।

দুই বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে এখন পড়ে আছে দুই হাজার ৫৪১টি গাড়ি। মোংলা বন্দরে রয়েছে পাঁচ হাজার ১০০ গাড়ি। গাড়ি বিক্রি না হওয়ায় শোরুমগুলোতেও কয়েক হাজার গাড়ি পড়ে আছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী সংগঠনটির নেতারা।

জানতে চাইলে পুরাতন গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার মহাসচিব মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িতে সরকার সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পায়। এখন ব্যবসা বন্ধ থাকায় সরকার যেমন রাজস্ব পাচ্ছে না, তেমনি গাড়ি ব্যবসায়ীরাও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এজন্য প্রথম দফায় ২৬ এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাড়ি রাখার ভাড়ায় ছাড় দেওয়ার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছি আমরা। গাড়ি ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়া হলে সরকারও রাজস্ব পাবে।