সিদ্ধান্ত হয়নি বোনাসের, অনিশ্চিত ঈদের আগে মজুরি

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আর ৯ থেকে ১০ দিনই পরই ঈদুল ফিতর। অধিকাংশ রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা এখনো গত এপ্রিলের মজুরি পরিশোধ করেনি। ফলে ঈদের আগে পোশাকশ্রমিকেরা বোনাস পাবেন কি না, সেটি নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি চলতি মাসের মজুরিও জুনের প্রথম সপ্তাহের আগে না দেওয়ার আভাস পাওয়া গেছে।

আজ বৃহস্পতিবার শ্রম ভবনে ত্রিপক্ষীয় কমিটির সদস্যরা প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক করেও, বিশেষ করে বোনাসের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন।
রাজধানীর শ্রম ভবনে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে আজকের সভায় তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক, সাবেক সভাপতি ও সাংসদ আবদুস সালাম মুর্শেদী ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, শ্রমিকনেতা ফজলুল হক, মন্টু ঘোষ, জলি তালুকদার, চায়না রহমান, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভা বেলা ১১টায় শুরু হয়ে ৩টা পর্যন্ত চললেও শ্রমিকের বোনাসের বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বরাবরের মতো মূল মজুরির সমপরিমাণ ঈদ বোনাস ২০ মের মধ্যে পরিশোধের দাবি করেছি। সেই সঙ্গে চলতি মে মাসের ১৫ দিনের মজুরি দেওয়ার দাবি করেছি। মালিকপক্ষ আমাদের দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানান। মালিকপক্ষের একজন বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল মজুরির ২৫ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি বোনাস দিতে পারবেন না বলে জানান।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিএমইএর এক নেতা বলেন, ত্রিপক্ষীয় সভায় করোনা সংক্রমণ রোধে শ্রমিকদের ঈদের ছুটি তিন দিন এবং চলতি মাসের মজুরি জুনের প্রথম সপ্তাহে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বোনাসের বিষয়ে আগামী সপ্তাহের শুরুতে বৈঠক হবে।
অবশ্য আজকের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক কয়েকজন শ্রমিকনেতা বয়কট করেন। তাঁদের মধ্যে আমিরুল হক আমিন বলেন, ‘শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা কাটছাঁট করাই যদি সভার আলোচনার মূল বিষয় হয়, তাহলে সেখানে গিয়ে কী লাভ?’ আরেক শ্রমিকনেতা সালাউদ্দিন স্বপন বলেন, ‘মালিকপক্ষ আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের বোনাস দেবেন। সেটি নিয়ে আলোচনার তো কিছু নেই।’
এদিকে মে মাসের ১৪ দিন শেষ হয়ে গেলেও সরকারের প্রণোদনার অর্থে অধিকাংশ কারখানাই মজুরি পরিশোধ করতে পারেনি। অন্যদিকে শতভাগ মজুরির দাবিতে আশুলিয়া, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের ২০ থেকে ২৫টি কারখানার শ্রমিকেরা আজ আন্দোলন করেছেন।
শিল্প পুলিশ জানায়, গাজীপুর, আশুলিয়া-সাভার, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার ৭ হাজার ৬০২টি শিল্পকারখানার মধ্যে ২ হাজার ১৯০টি গত মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে। তার মধ্যে বিজিএমইএর ১ হাজার ৮৮২ সদস্য কারখানার মধ্যে মজুরির দিয়েছে ৫৬১টি। বিকেএমইএর সদস্য ১ হাজার ১০১টি সদস্য কারখানার ২৯০টি শ্রমিকের মজুরি দিয়েছে। এ ছাড়া বিটিএমএর সদস্য ৩৮৯টি কারখানার মধ্যে ১২৬টি বেতন পরিশোধ করেছে। তবে বিজিএমইএর ৫৪ ও বিকেএমইএর ৪২টি সদস্য কারখানা এখন পর্যন্ত গত মার্চেও মজুরি দেয়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শিল্প পুলিশের সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান, আশুলিয়ার মেডলার অ্যাপারেল, সিটকো ফ্যাশন, ম্যাগপাই নিট কম্পোজিট, আঞ্জুমান গার্মেন্টস, আদিত্য ফ্যাশন, রাই অ্যান্ড রাই অ্যাপারেলের শ্রমিকেরা শতভাগ মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। তা ছাড়া শতভাগ মজুরিসহ অন্যান্য দাবিতে গাজীপুরের ১৫টি ও চট্টগ্রামের তিনটি পোশাক কারখানায় শ্রম অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে।
গত ২৮ এপ্রিল সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় এপ্রিল মাসে কারখানা বন্ধকালীন শ্রমিক-কর্মচারীরা মোট মজুরির ৬০ শতাংশ অর্থ পাবেন। আর যে কয়দিন কর্মদিবস ছিল, সে কয়দিনের পূর্ণ মজুরি পাবেন তাঁরা। পরদিন কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে সেটি চূড়ান্ত করে শ্রম মন্ত্রণালয়। ৪ মে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) নেতাদের সঙ্গে সরকার ও মালিকপক্ষের সভায় এপ্রিলের মজুরি ৬৫ শতাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে বাড়তি ৫ শতাংশ মে মাসের মজুরির সঙ্গে দেবেন মালিকেরা। সভা শেষে রাতে আইবিসির নেতারা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, সর্বসম্মতিক্রমে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অবশ্য পরে আইবিসি ও গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করে বিজিএমইএ।
মজুরির পরিশোধে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ব্যাংকগুলোর প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণেই দেরি হচ্ছে। এমন অবস্থা চললে অনেক কারখানাই ঈদের আগে মজুরি পরিশোধ করতে পারবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।