জুতা এবার গুদামেই থাকবে, বিক্রি কমতে পারে ৮৫%

ছবি : প্রথম আলো
ছবি : প্রথম আলো
>দেশে বছরে মোট জুতা কেনাবেচার ৩৫-৪০ শতাংশ হয় পয়লা বৈশাখ ও ঈদে। এবার ৪৫ দিন পর দোকান খুললেও ক্রেতা কম।

পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে বাড়তি উৎপাদন। বাড়তি বিক্রির প্রস্তুতি। কিন্তু করোনার হানায় সবকিছু পাল্টে গেল। তাই বাড়তি উৎপাদনই এখন মাথাব্যথার কারণ জুতা ব্যবসায়ীদের।

দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি জুতার ব্র্যান্ড বলছে, সারা বছরে তারা যে পণ্য বিক্রি করে, তার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ হয় পয়লা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরে। গত বছরের ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনার তুলনায় এবার বিক্রি নামবে ১৫ শতাংশে।

দেশে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটি চলছে গত ২৬ মার্চ থেকে। ওই দিন থেকে ৯ মে পর্যন্ত দোকানপাট বন্ধ ছিল। দোকানপাট খুললেও ক্রেতা কম। তাই বিক্রেতারা বলছেন, অনেক জুতায় এবার গুদাম থেকে বের করতে হবে না।

জুতার বাজারে বিক্রির দিক দিয়ে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বাটা শু বাংলাদেশের রিটেইল অপারেশন ম্যানেজার আরফানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বাটার নিজস্ব ২৬০ বিক্রয়কেন্দ্র বা শোরুমের মধ্যে খুলেছে ১৮০টি। তাদের হাতে যে পরিমাণ পণ্য মজুত আছে, তার দাম ৩০০ কোটির টাকার বেশি। তিনি আরও বলেন, এবার করোনার কারণে ব্যবসা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ব্র্যান্ডের জুতার বাজারে বাটা ও অ্যাপেক্সের হিস্যাই বেশি। বাটার আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) তাদের বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬৩০ কোটি টাকা। আগের বছর একই সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭১৫ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে ১২ শতাংশের মতো কম।

অন্যদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অ্যাপেক্স ৭৬০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছিল। আগের বছর ছিল ৬৯৫ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে বিক্রি বেড়েছিল ৯ শতাংশের কিছু বেশি।

অ্যাপেক্স জানিয়েছে, তারা এবার বেশি বিক্রির আশায় বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছিল। সাধারণ ছুটি শুরুর আগেই প্রায় সব পণ্য তৈরি করা হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল পয়লা বৈশাখের আগে পণ্যগুলো বাজারে ছাড়া। কিন্তু সবকিছু ভেস্তে গেছে করোনার হানায়।

অ্যাপেক্সের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সুদর্শন রেড্ডি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব সুরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আমি শোরুম খুলেছি। তবে কিছু বিপণিবিতান বন্ধ থাকায় ও কিছু এলাকায় সংক্রমণ বেশি থাকায় ২৫৩টি স্টোরের ৬০ শতাংশ খোলা গেছে।’ তিনি বলেন, ‘বিক্রি ততটা ভালো নয়।’

জুতার বাজারে আরেক ব্র্যান্ড বে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘সারা বছরে যা বিক্রি হয়, তার ৪০ শতাংশের মতো বিক্রি হয় ঈদকেন্দ্রিক বাজারে। এবার ঈদে গত বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশের মতো পণ্য বিক্রি হতে পারে।’

দেশীয় জুতার বাজারের ধরন দুটি। একটি ব্র্যান্ডের জুতার বাজার, অন্যটি নন–ব্র্যান্ড। বাটা, অ্যাপেক্স, বে, ওরিয়ন, লেদারেক্স, জেনিস, ফরচুনা, জিলস, স্টেপ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছে। কয়েক বছরে আরএফএল গ্রুপ ওয়াকার ও ইউ-এস বাংলা গ্রুপ ভাইব্রেন্ট ব্র্যান্ডের জুতা নিয়ে এসেছে।

চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী অপেক্ষাকৃত কম দামের জুতা উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে একটি ভৈরব। সেখানে ২০টির মতো গ্রামে ছোট ও মাঝারি ১০ হাজারের বেশি কারখানা জুতা তৈরি করে। এবার তারা ব্যাপক সংকটে রয়েছে।

ভৈরব পাদুকা কারখানা মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আলামিন মিয়া বলেন, এবার ঈদে মনে হয় ১০ শতাংশ বেচাকেনাও হবে না। এক লাখ শ্রমিক, ১০ হাজারের মতো কারখানার উদ্যোক্তা ও ৪০০ জনের পাইকারি ব্যবসায়ী জুতার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা সবাই বিপাকে রয়েছেন।

একটি জুতা বিক্রি হলে উৎপাদক, শ্রমিক, পাইকারি বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা ও পরিবহনের সঙ্গে যুক্তদের ঘরে ভাগ যায়। সরকার পায় রাজস্ব। খুচরা দোকানেই যখন বিক্রি নেই, তখন বঞ্চিত সবাই।