মধ্যবিত্তের আর্থিক সংগতির ওপর নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যৎ

করোনার কারণে সারা বিশ্বেই ছোট-বড় সব ব্যবসা-বাণিজ্য এখন কল্পনাতীত কঠিন পরিস্থিতির মুখে। এই মহামারির প্রথম আঘাত পড়েছে ভ্রমণ-পর্যটন ও হোটেল-রেস্তোরাঁ; পোশাক-ফ্যাশন; রপ্তানিমুখী পণ্য, রড-সিমেন্টের কারবারসহ নির্মাণ খাতে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে এসব খাত। ইতিমধ্যে কিছু কার্যক্রম চালু হলেও তা গতি পায়নি। কারণ, করোনা পরিস্থিতিতে এবং পরেও মানুষের চাহিদায় পরিবর্তন অনিবার্য। তাঁরা কেনাকাটা ও খরচে অনেক সংযত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। থাকবে নানামুখী চ্যালেঞ্জও। তাই ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দীর্ঘ সময় লাগবে। জীবন নিয়ে শঙ্কার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানোর আশাবাদে ব্যবসায়ীরা তাঁদের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন। করোনার ব্যবসায়িক ক্ষতি কাটাতে এরই মধ্যে সরকার লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। ব্যবসায়ীরা চান সেই প্রণোদনার সঠিক বাস্তবায়ন, যাতে প্রকৃত ব্যবসায়ী ও ক্ষতিগ্রস্তরা এ সুবিধা পান। এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। কথা বলেছেন মাসুদ মিলাদ, রাজীব আহমেদ, শুভংকর কর্মকার, সানাউল্লাহ সাকিব মাকসুদা আজীজ
মীর আক্তার উদ্দীন

স্বত্বাধিকারী
স্টার কাবাব ও রেস্টুরেন্ট 

আমাদের আটটি আউটলেট আছে, সেখানে কাজ করেন হাজারের ওপর কর্মচারী। দৈনিক প্রায় ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা খাদ্য সরবরাহ করে থাকি, সব মিলিয়ে কখনোই স্টার কাবাব ও বেকারির চুলা ঠান্ডা হয় না। করোনার কারণে আমাদের সেই চুলা এখন ঠান্ডা হয়ে গেছে। রান্নাঘরের অবিরাম কর্মব্যস্ততা হঠাৎই যেন থমকে গেছে। সামনে কী হবে, তা আর ভাবতে পারছি না।

প্রায় দেড় মাস পর ১০ মে থেকে আবার দোকান খোলার অনুমতি পাই। দোকান খোলার অনুমতি মিললেও এখনো কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি অধিকাংশ কর্মচারী। এরই মধ্যে করোনার কারণে ভোক্তার জীবনযাপনেও এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। এতে আমরা সমস্যায় পড়েছি দুদিক থেকেই। একদিকে কাজ করার লোকের স্বল্পতা, অন্যদিকে পণ্য তৈরি করা হলেও বিক্রির কোনো নিশ্চয়তা নেই। অন্যান্য বছর রমজান মাসে আমরা যে পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করি, এ বছর তার ১০ ভাগের এক ভাগও বিক্রি হচ্ছে না। 

দুই মাস ধরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোনো বেচাকেনা নেই, ফলে আয়ও নেই। তারপরও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এপ্রিল পর্যন্ত সব কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। হয়তো সামনে আরও এক বা দুই মাস এভাবে চালানো যাবে। কিন্তু এরপর আয় না থাকলে এই খরচ কুলানোর মতো আর সামর্থ্য থাকবে না। 

স্টার কাবাব ও বেকারি ৪৮ বছরের পুরোনো একটি প্রতিষ্ঠান। আমার বাবা এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন। করোনার কারণে যদি ব্যবসায় লোকসানও হয়, আমি এটাকে ছেড়ে নতুন কিছু করতে পারব না।

বৈশ্বিক মহামারিতে ব্যবসার গতি যেদিকে যাচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছি না। প্রতিদিন পরিস্থিতি বদলাছে। এত কিছুর পরও আমার বিশ্বাস, শিগগিরই অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান হবে, কিছুদিনের মধ্যে হয়তো আমরা আগের অবস্থায় যেতে পারব। আর সেটি যদি না পারি, তবে সময় ও পরিস্থিতি বলে দেবে কী করতে হবে। তবে এরই মধ্যে খাবার সরবরাহকারী প্রযুক্তিগত উদ্যোগগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। সামনে অন্যগুলোর সঙ্গেও যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছি। চলাচল স্বাভাবিক হলেও রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়ার বিষয়টি কতটা নিরাপদ করা যায়, তা নিয়েও ভাবছি। আমাদের ক্রেতা মূলত মধ্যবিত্তরা। করোনা শেষে তাঁদের আর্থিক সংগতি কতটা বদলাবে, সেটির ওপর নির্ভর করছে স্টার কাবাবের ভবিষ্যৎ। 

রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী হিসেবে সরকার থেকে সে অর্থে কোনো সহযোগিতা এখনো পাইনি। আমাদের ক্ষতির পরিমাণ অন্য সব ব্যবসার তুলনায় বেশি ছাড়া কম নয়। সরকার যদি কর্মীদের জন্য কিছু সুযোগ–সুবিধা দিত, তাতেও আমরা উপকৃত হতাম।