হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিতে আশার আলো দেখছি

করোনার কারণে সারা বিশ্বেই ছোট-বড় সব ব্যবসা-বাণিজ্য এখন কল্পনাতীত কঠিন পরিস্থিতির মুখে। এই মহামারির প্রথম আঘাত পড়েছে ভ্রমণ-পর্যটন ও হোটেল-রেস্তোরাঁ; পোশাক-ফ্যাশন; রপ্তানিমুখী পণ্য, রড-সিমেন্টের কারবারসহ নির্মাণ খাতে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে এসব খাত। ইতিমধ্যে কিছু কার্যক্রম চালু হলেও তা গতি পায়নি। কারণ, করোনা পরিস্থিতিতে এবং পরেও মানুষের চাহিদায় পরিবর্তন অনিবার্য। তাঁরা কেনাকাটা ও খরচে অনেক সংযত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। থাকবে নানামুখী চ্যালেঞ্জও। তাই ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দীর্ঘ সময় লাগবে। জীবন নিয়ে শঙ্কার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানোর আশাবাদে ব্যবসায়ীরা তাঁদের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন। করোনার ব্যবসায়িক ক্ষতি কাটাতে এরই মধ্যে সরকার লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। ব্যবসায়ীরা চান সেই প্রণোদনার সঠিক বাস্তবায়ন, যাতে প্রকৃত ব্যবসায়ী ও ক্ষতিগ্রস্তরা এ সুবিধা পান। এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। কথা বলেছেন মাসুদ মিলাদ, রাজীব আহমেদ, শুভংকর কর্মকার, সানাউল্লাহ সাকিব ও মাকসুদা আজীজ
কাজী বেলায়েত হোসেন
সভাপতি
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন

করোনাভাইরাসের কারণে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। তবে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশের পাশাপাশি জাপানে আবার হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি শুরু হয়েছে। তাতে ১০-১২টি প্রক্রিয়াজাত কারখানা চালু হয়েছে। আশা করছি, করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিংড়ি রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। তবে হয়তো দাম কম থাকবে। 

ইউরোপের অনেক দেশে এখনো লকডাউন চলছে। হিমায়িত চিংড়ি নিত্যপণ্য না হওয়ায় চাহিদা একেবারেই কম। দামও বেশ পড়ে গেছে। গতবার ১৬ থেকে ২০ গ্রেডের যেসব হিমায়িত চিংড়ির প্রতি পাউন্ডের দাম ছিল গড়ে ৬ ডলার, সেখানে বর্তমানে ৪ ডলার ৮০ সেন্ট থেকে ৪ ডলার ৯০ সেন্টের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে লাভ-লোকসান যা–ই হোক, আমাদের উদ্যোক্তারা পুশ সেল করার চেষ্টা করছেন। তাতে রপ্তানি শুরু হয়েছে। আগে এক মাসে একেকজন রপ্তানিকারক যেখানে ১০টি ক্রয়াদেশ    পেতেন, সেখানে বর্তমানে ২-৩টি পাচ্ছেন। কেউ কেউ ৪-৫টি ক্রয়াদেশ পেতে শুরু করেছেন। অনেক ক্রেতাই আশ্বাস দিচ্ছেন, পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেই ক্রয়াদেশ দেবেন। 

করোনার শুরুতে ২৯৯টি ক্রয়াদেশ স্থগিত বা বাতিল হয়েছিল। তাতে ৪৬০ কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়া হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারকদের গলার কাঁটা হয়ে গেছে। বর্তমানে দাম কমে যাওয়ায় অনেক বিদেশি ক্রেতা আর আগের মূল্যে পণ্য নিতে চাচ্ছেন না। তারপরও সেসব চিংড়ি পুনরায় বিক্রি করার চেষ্টা করছেন রপ্তানিকারকেরা। 

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের তিন মাসের মজুরি দেওয়ার জন্য সরকার প্রণোদনা তহবিল গঠন করেছে। সেই তহবিল থেকে ঋণ নিতে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারকেরা আবেদনও করেছেন। তবে ঋণ প্রাপ্তি বিলম্ব হওয়ায় রপ্তানিকারকেরা আগেই শ্রমিক-কর্মচারীর এপ্রিল মাসের মজুরি দিয়ে দিয়েছেন। সংগঠন থেকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

করোনা মোকাবিলায় সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তাতে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে এক বছরের জন্য ঋণ পাবেন রপ্তানিকারকেরা। তবে ব্যাংকগুলো বলছে, যে পরিমাণ ঋণ নেবেন, সেই পরিমাণ জামানত দিতে হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো তো আগেই বিভিন্ন সময় যেসব ঋণ নিয়েছে, তার বিপরীতে জামানত দিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে তাদের জামানত দেওয়ার কোনো উপায় নেই। তা ছাড়া করোনার কারণে বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলে তো কারও ঋণ লাগত না। প্রধানমন্ত্রী যখন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন, তখন আমরা আশার আলো দেখেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক যখন প্রজ্ঞাপন জারি করল, তখন অনেক ফাঁকফোকর রাখা হয়। সেটির সুযোগ নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। তাই জামানত দেওয়ার জায়গায় ছাড় না দেওয়া হলে রপ্তানিকারকেরা উপকৃত হবেন না।