প্রণোদনার সুফল উদ্যোক্তাদের হাতে পৌঁছাতে নিয়মকানুন সহজ করা দরকার

করোনার কারণে সারা বিশ্বেই ছোট-বড় সব ব্যবসা-বাণিজ্য এখন কল্পনাতীত কঠিন পরিস্থিতির মুখে। এই মহামারির প্রথম আঘাত পড়েছে ভ্রমণ-পর্যটন ও হোটেল-রেস্তোরাঁ; পোশাক-ফ্যাশন; রপ্তানিমুখী পণ্য, রড-সিমেন্টের কারবারসহ নির্মাণ খাতে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে এসব খাত। ইতিমধ্যে কিছু কার্যক্রম চালু হলেও তা গতি পায়নি। কারণ, করোনা পরিস্থিতিতে এবং পরেও মানুষের চাহিদায় পরিবর্তন অনিবার্য। তাঁরা কেনাকাটা ও খরচে অনেক সংযত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। থাকবে নানামুখী চ্যালেঞ্জও। তাই ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দীর্ঘ সময় লাগবে। জীবন নিয়ে শঙ্কার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানোর আশাবাদে ব্যবসায়ীরা তাঁদের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন। করোনার ব্যবসায়িক ক্ষতি কাটাতে এরই মধ্যে সরকার লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। ব্যবসায়ীরা চান সেই প্রণোদনার সঠিক বাস্তবায়ন, যাতে প্রকৃত ব্যবসায়ী ও ক্ষতিগ্রস্তরা এ সুবিধা পান। এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। কথা বলেছেন মাসুদ মিলাদ, রাজীব আহমেদ, শুভংকর কর্মকার, সানাউল্লাহ সাকিব ও মাকসুদা আজীজ
আলীহোসেইন আকবরআলী
চেয়ারম্যান, বিএসআরএম গ্রুপ

করোনার প্রভাব সব খাতেই পড়েছে। এর মধ্যে আছে ইস্পাত খাতও। করোনার কারণে ইস্পাত কারখানাগুলোর উৎপাদন কমে ৩০-৩৫ শতাংশে নেমেছে। ছোট কারখানার অনেকগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। কারণ, পণ্য উৎপাদন হলেও বিক্রি বলতে গেলে নেই।

আমরা দেখেছি, গত দুই মাসে ইস্পাত খাতের বিক্রি ৭০ শতাংশ কমে গেছে। বেসরকারি খাতের প্রকল্প স্থবির হয়ে গেছে। সরকারি খাতেও প্রকল্পের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ বা সীমিত হয়ে গেছে। ফলে ইস্পাত কারখানাগুলোতে যা উৎপাদিত হচ্ছে, তা বিক্রি করা যাচ্ছে না।

করোনার প্রভাব মোকাবিলায় সরকার শুরু থেকেই নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন মনে হয়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ধীরে ধীরে চালু করে দেওয়া উচিত। যেখানে সংক্রমণ বেশি, শুধু সেই এলাকায় কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা কঠোরভাবে তদারকি করা উচিত। এর উদাহরণ হচ্ছে, হংকং। সেখানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা হয়েছে। আমাদের চাওয়া, দেশে সংকট আরও গভীর হওয়ার আগেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করা হোক। 

প্রায় দুই মাস ধরে ইস্পাত-সিমেন্ট বিক্রির খুচরা দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে কোথাও সামান্য চাহিদা থাকলেও ইস্পাত পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। আবার সরকারি প্রকল্পগুলোতেও পুরোদমে কাজ হচ্ছে না। আমরা চাই, সরকারি নির্মাণ প্রকল্পগুলোর কাজ পুরোদমে শুরু হোক। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে সরকার নতুন প্রকল্পও হাতে নিক। খুচরা দোকানগুলো খুলে দিক। এতে ইস্পাত বা সিমেন্টের ওপর নির্ভরশীল অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের চাকা সচল হবে। ইস্পাত খাতের প্রকল্পগুলোর বড় সমস্যা হলো, পণ্য বিক্রি করেও বিল হাতে না পাওয়া। যেমন সরকারি প্রকল্পে যারা ইস্পাত পণ্য বা রড সরবরাহ করছে, সেখানে বড় ধরনের বিল আটকে গেছে ইস্পাত কোম্পানিগুলোর। সরকার যদি এই বিল দ্রুত পরিশোধ করে দেয়, তাহলে ইস্পাত কোম্পানিগুলোর নগদ অর্থের সংকট কাটবে। বিল আটকে থাকায় পরিচালন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক উদ্যোক্তা। 

করোনার এ সময়ে সব খাতেই কম-বেশি লোকসান হচ্ছে। সংকটের এ সময়ে আমরা ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ মাফ চাই না। সরকার যে সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করেছে, তা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি। এখন ব্যাংকগুলো যাতে সরকারের সিদ্ধান্ত দ্রুত ও সহজে কার্যকর করে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে নিয়মকানুন সহজ করতে পারে, যাতে সরকারের প্রণোদনার সুফল প্রকৃত উদ্যোক্তাদের হাতে পৌঁছায়। 

সংকটের এ সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ইস্পাতের কাঁচামাল খালাসে কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা সমস্যায় পড়েছি বেনাপোল স্থলবন্দর বন্ধ থাকায়। স্থলবন্দরটি বন্ধ থাকায় ভারতীয় সীমান্তে ইস্পাত খাতের বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল আটকে আছে। এর মধ্যে আছে রাসায়নিক, স্পঞ্জ আয়রন ইত্যাদি। ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলে বেনাপোল বন্দরে আটকে থাকা শিল্পের কাঁচামাল আনার ব্যবস্থা করা দরকার।