বছর শেষে মোটরসাইকেল বিক্রি ৩০-৪০% কম হবে

কাজী আশিক উর রহমান, সিইও, র‍্যানকন মোটরবাইকস লি.
কাজী আশিক উর রহমান, সিইও, র‍্যানকন মোটরবাইকস লি.
>

করোনাভাইরাস দেশে কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তার মধ্যে একটি খাত হলো দেশের মোটরসাইকেল শিল্প। এ খাতের একটি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী বলছেন বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে।

দেশে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। এরপর এপ্রিল মাসে মোটরসাইকেল বিক্রি শূন্যের কোঠায় নামে। কোনো কোম্পানিরই কোনো বিক্রি ছিল না, আমাদের (সুজুকি ব্র্যান্ডের) মোটরসাইকেলও বিক্রি হয়নি। ১০ মে থেকে সীমিত পর্যায়ে দোকানপাট খোলার পর এখন কিছু বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। তবে সেটা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ।

একটা ভালো দিক হলো, সচেতন মানুষের কেউ কেউ করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে গণপরিবহন এড়িয়ে চলাচল করতে চাইছেন। অ্যাপভিত্তিক শরিকি যাত্রা বা রাইড শেয়ারিংয়েও তাঁরা আগ্রহী নন। তাঁদের একাংশই এখন মোটরসাইকেল কিনছেন। ফলে করোনাপরিস্থিতির মধ্যেও কিছু কিছু মোটরসাইকেল বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ের ক্রেতা আমরা পাচ্ছি না।

দেশে মোটরসাইকেল বিক্রির ভরা মৌসুম মার্চ থেকে শুরু হয়। এ সময় গ্রামে নতুন ফসল ওঠে। পয়লা বৈশাখ ও পবিত্র ঈদুল ফিতরে কেনাবেচা বেশ ভালো হয়। বিক্রি ভালো থাকে মোটামুটি পবিত্র ঈদুল আজহা পর্যন্ত। এবার করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে আমরা ভরা মৌসুমটি হারাচ্ছি।

সব মিলিয়ে আমাদের আশঙ্কা, বছর শেষে মোটরসাইকেল বিক্রিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে, এটা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দাঁড়াতে পারে। কয়েক বছর ধরে মোটরসাইকেল বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছিল। এ বছরই কোম্পানিগুলো বিপাকে পড়ল। আমাদের সমিতি থেকে একটা হিসাব করা হয়েছিল যে মোটরসাইকেল খাত করোনাভাইরাসের কারণে ৬০০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়বে।

র‍্যানকন মোটরবাইক ২০১৫ সালে দেশে জাপানের সুজুকি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল সংযোজন শুরু করে। এখন আমরা উৎপাদনকারী, মোটরসাইকেলে আমাদের মূল্য সংযোজন ৩০ শতাংশের বেশি। দেশে এখন তিনটি কোম্পানি মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী হিসেবে স্বীকৃত, যার একটি আমাদের র‍্যানকন মোটরবাইক। এ জন্য নিয়মিত বিনিয়োগ করে যেতে হয়েছে। আমাদের প্রাক্কলন ছিল, যেভাবে মোটরসাইকেল বিক্রি বাড়ছে, তাতে ২০২৩ সাল নাগাদ বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফা আসবে। কিন্তু এবার করোনা যে ধাক্কা দিল, তাতে সে আশা আর করা যাচ্ছে না। আমাদের আশঙ্কা, মুনাফার দেখা পেতে আরও পাঁচ বছর লেগে যাবে।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কেটে গেলেই যে মোটরসাইকেল খাত আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে যাবে, সে আশা করতে পারছি না। কারণ একটি অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সময় মানুষের আয় কমে যাবে। অনিশ্চয়তার কারণে মানুষ ব্যয় কমিয়ে দেবে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জরুরি পণ্যের বাইরে মোটরসাইকেলের মতো দামি পণ্য অনেকেই কিনতে চাইবেন না।

আমরা চাই মানুষের কাছে মোটরসাইকেল আরেকটু সহজলভ্য করতে নিবন্ধন মাশুল বা ফি কমানো হোক। দেশে তৈরির কারণে মোটরসাইকেলের দাম বেশ কমেছে। যেসব মোটরসাইকেল ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার আশপাশে ছিল, তা এখন ৯০ হাজার টাকার আশাপাশে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু নিবন্ধন মাশুল কমেনি। ফলে একটি মোটরসাইকেলের মোট দামের ১৮ শতাংশ পড়ে যাচ্ছে নিবন্ধন মাশুল।

আমাদের দাবি, এটা কমানো হোক। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে মোটরসাইকেল নিবন্ধন ব্যয় অনেক বেশি। এটা কমানো হলে করোনার কারণে চাহিদার ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এ ছাড়া মোটরসাইকেলের নিবন্ধন বাড়বে, যা সরকারকে বাড়তি রাজস্বও দেবে।

 সিইও, র‍্যানকন মোটরবাইকস লি.