মজুরি ও বোনাস পাননি অনেক পোশাক কারখানার শ্রমিক

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঈদের দিন ঘনিয়ে এলেও রপ্তানিমুখী অনেক তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক এখনো গত এপ্রিল মাসের মজুরি পাননি। বোনাস পেয়েছেন হাতে গোনা কিছু কারখানার শ্রমিক। আবার বেশ কিছু কারখানা ঈদের আগে মজুরি ও বোনাস দিতে পারবে কি না, সেটি নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

এদিকে মজুরি ও বোনাসের দাবিতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার পোশাকশ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জের ৩০টির বেশি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা আজ মঙ্গলবার বকেয়া মজুরির পাশাপাশি শতভাগ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। সড়ক অবরোধের ঘটনাও ঘটেছে।

শিল্প পুলিশ জানায়, গাজীপুর, আশুলিয়া-সাভার, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার ৭ হাজার ৬০২টি শিল্পকারখানার মধ্যে ৪ হাজার ৮০টি গত মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে। তার মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ১ হাজার ৮৮২ সদস্য কারখানার মধ্যে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করেছে ১ হাজার ৩০৬টি।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর ১ হাজার ১০১টি সদস্য কারখানার মধ্যে ৪৪৪টি শ্রমিকের মজুরি দিয়েছে। এ ছাড়া বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর ৩৮৯টি সদস্য কারখানার মধ্যে ২১৬টি মজুরি দিয়েছে। তবে বিজিএমইএর ৪৯ ও বিকেএমইএর ৩৯টি সদস্য কারখানা এখনো গত মার্চের মজুরি দেয়নি।

এদিকে ঈদ বোনাস পরিশোধে পিছিয়ে রয়েছে অধিকাংশ কারখানা। শিল্প পুলিশের হিসাবে, বিজিএমইএর ১ হাজার ৮৮২ কারখানার মধ্যে আজ পর্যন্ত মাত্র ৮৩টি বোনাস পরিশোধ করেছে। তা ছাড়া বিকেএমইএর ২৩টি ও বিটিএমএর ১২টি সদস্য কারখানা বোনাস দিয়েছে। অবশ্য শিল্প পুলিশের হিসাবে, ঢাকা মহানগরীর কারখানাগুলোর কোনো তথ্য নেই। ফলে এটি মজুরি ও বোনাস পরিশোধের পূর্ণাঙ্গ চিত্র নয়।

ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে বিজিএমইএর সদস্যসংখ্যা ৪ হাজার ৬২১। তার মধ্যে সরাসরি পোশাক রপ্তানি করে ২ হাজার ২৭৪। অন্যদিকে বিকেএমইএর সচল কারখানার সংখ্যা ৮৩৩।

জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের সদর দপ্তরের সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান, আশুলিয়ার রেজা ফ্যাশন, মম ফ্যাশন, সেতু গার্মেন্টস, সিনহা নিট ডেনিম, এফবি এক্সিলেন্ট, থ্রি এ ফ্যাশনসহ ১৩টি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা আজ শতভাগ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। এ ছাড়া গাজীপুরের ডেল্টা গ্রুপ, ইউনিটেক্স অ্যাপারেলস, পার্ল প্রিন্স অ্যাপারেলস, ইবি টেক্স, ট্রিভেলি অ্যাপারেলসসহ ১৪টি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া মজুরি ও শতভাগ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধও করেন। নারায়ণগঞ্জের ফকির নিটওয়্যার, মাইক্রো ফাইবার, এজেডসি স্পিনিং নামের কারখানায় বকেয়া মজুরি ও বোনাসের দাবিতে শ্রম অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে।

মজুরি পরিশোধে বিলম্বের বিষয়ে জানতে চাইলে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, মজুরি পরিশোধের জন্য সরকারের গঠিত তহবিল থেকে ঋণ নিতে ব্যাংকে কারখানাগুলো আবেদন করেছে। তবে নানা কারণে সেই অর্থ ছাড় হতে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, যেসব কারখানা ঋণের জন্য আবেদন করেনি, তাদের একটা অংশ হয়তো মজুরি ও বোনাস দিতে পারবে কি না, সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২ মে পর্যন্ত ২ হাজার ১৩২ পোশাক কারখানা শ্রমিক-কর্মচারীর এক মাসের মজুরি দিতে ৩ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা ঋণের জন্য ব্যাংকে আবেদন করেছে। সর্বশেষ চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সরকার, মালিক ও শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়, গত এপ্রিল মাসে কারখানা বন্ধের সময় শ্রমিকেরা ৬৫ শতাংশ মজুরি পাবেন। তার মধ্যে ৬০ শতাংশ চলতি মাসে পাবেন শ্রমিকেরা। বাকি ৫ শতাংশ জুনে দেওয়া হবে। করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মজুরির পর আপাতত বোনাসও কম পাবেন শ্রমিকেরা।

গত শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, গতবার পোশাকশিল্পের মালিকেরা শ্রমিকদের যে পরিমাণ ঈদ বোনাস দিয়েছিলেন, এবার তার অর্ধেক দেবেন। বাকি অর্ধেক আগামী ছয় মাসের মধ্যে সমন্বয় করা হবে।