তারা তামাকশিল্পের মুখপাত্রের মতো কাজ করছে: সাবের চৌধুরী

সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী। ফাইল ছবি
সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী। ফাইল ছবি

হুট করে সিগারেট–বিড়িশিল্প বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয় যে বক্তব্য দিয়েছে, তার সমালোচনা করেছেন সরকারি দলের সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমি দুঃখিত, তারপরও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে তারা তামাকশিল্পের মুখপাত্রের মতো কাজ করছে। শিল্প মন্ত্রণালয় রাজস্ব আদায়ের কথা বলছে, কিন্তু তামাকের কারণে যে ৮ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ স্বাস্থ্যক্ষতি হচ্ছে, সেটা উল্লেখ করছে না।’

তামাক ও তামাকজাতীয় পণ্য গ্রহণের কারণে রোগাক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ মারা যায় এবং বছরে ৪ লাখ লোক হৃদ্‌যন্ত্র ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয় বলে উল্লেখ করেন সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ নাগরিকদের জীবন সুরক্ষার অধিকার দিয়েছে, কিন্তু তামাক সেটা কেড়ে নিচ্ছে।

গত সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়কে তামাক পণ্যের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। এ খবর গণমাধ্যমে আসে মঙ্গলবার। বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে তাদের অবস্থান তুলে ধরা হয়। মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিটি দিয়েছে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিবেশিত সংবাদের ব্যাখ্যা হিসেবে।

শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, চাষি ও শ্রমিকের কর্মসংস্থান, রাজস্ব, বিনিয়োগসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় হুট করে তামাকশিল্প সাময়িক বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে ২০৪১ সালের মধ্যে ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিকে তারা পূর্ণাঙ্গভাবে সমর্থন করে। এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সাধারণ ছুটি শুরুর পর গত ৪ এপ্রিল ইউনাইটেড ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড সিগারেট উৎপাদন, তামাক ক্রয় এবং উৎপাদিত সিগারেট বিতরণ ও বিক্রির অনুমতি চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। তারা উল্লেখ করে যে ১৯৫৬ সালের জরুরি পণ্য আইন অনুযায়ী সিগারেট একটি জরুরি পণ্য। এর পরদিন আবেদন অনুযায়ী তাদের সব ধরনের সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে চিঠি পাঠায় শিল্প মন্ত্রণালয়।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের এমন অনুমতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। গত ২০ এপ্রিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে পাঠানো এক চিঠিতে করোনা পরিস্থিতিতে বিড়ি-সিগারেটের উৎপাদন, বিতরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে বুধবার প্রথম আলোকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জনস্বাস্থ্য অর্থনৈতিক চিন্তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত। তারা (শিল্প মন্ত্রণালয়) যে বক্তব্য দিচ্ছে, সেটা যে তামাক কোম্পানিগুলোর বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি।

সাবের হোসেন চৌধুরী আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি, বাংলাদেশ ক্যানসার স্যোসাইটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যৌথ সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক খাত থেকে ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। অন্যদিকে তামাকজনিত রোগে মানুষের চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।