করোনায় বন্ধ ৪১৯ পোশাক কারখানা

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের কারণে ক্রয়াদেশ বাতিলসহ নানা কারণে সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানিমুখী ৩৪৮টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৮টি কারখানা বিজিএমইএ ও ৭১টি বিকেএমইএর সদস্য। কারখানাগুলো গত দুই মাসে বন্ধ হয়েছে। তবে সবই স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্ধ হওয়া বিজিএমইএর সদস্য ৩৪৮টি কারখানার মধ্যে ২৬৮টি ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ায় বসে গেছে। বাকি ৮০টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ। বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৪০টি, আশুলিয়া-সাভারে ৭৯টি, গাজীপুরে ৯২টি, নারায়ণগঞ্জে ৭০টি ও চট্টগ্রামে ৬৭টি রয়েছে।

প্রায় সাড়ে তিন শ কারখানা বন্ধ হওয়ায় বিজিএমইএর সচল কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ২৭৪ থেকে কমে ১ হাজার ৯২৬টিতে দাঁড়িয়েছে। তাদের মোট সদস্য কারখানার সংখ্যা ৪ হাজার ৬২১টি।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর গণমাধ্যম-সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান খান মনিরুল আলম গতকাল বুধবার কারখানা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'ধারণা করা হচ্ছে, ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হওয়ার কারণেই অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়েছে। তবে ২০১৮ সালে মজুরি বৃদ্ধির পর থেকে অনেক কারখানা টিকে থাকার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তারপরও কারখানাগুলো কেন বন্ধ হলো, তা ঈদের পর অনুসন্ধান করে দেখা হবে।'

কারখানা বন্ধ হওয়ায় কত শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি খান মনিরুল আলম।করোনাভাইরাস চীনের বাইরে ইউরোপ ও আমেরিকায় ছড়িয়ে যাওয়ার পর গত মার্চে একের পর এক পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হওয়ার তথ্য আসতে থাকে।

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১ হাজার ১৫০ কারখানার ৩১৮ কোটি ডলারের পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। এতে প্রায় ২২ লাখ পোশাকশ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এ ব্যাপারে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর কারখানার নিরাপত্তা ইস্যুর কারণে সহস্রাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উৎপাদন খরচ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়ে অনেক কারখানা। সংকট কাটাতে না পারায় গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর সময়ে ৬০টির বেশি কারখানা বন্ধ হয়। বর্তমানে করোনার কারণে ছোটর পাশাপাশি বড় কমপ্লায়েন্ট কারখানাও ভয়াবহ সংকটের মধ্যে পড়েছে। ফলে বন্ধের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে সাড়ে তিন শ কারখানা।

অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিএমইএর একজন নেতা বলেন, সংগঠনটির ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ কারাখানা নিয়মিতভাবে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির জন্য ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) নিয়ে থাকে। বাকি কারখানাগুলো অনিয়মিতভাবে ইউডি নেয়। সেগুলো সাধারণত নূন্যতম কমপ্লায়েন্স পরিপালন করে ঠিকায় (সাবকন্ট্রাকটিং) কাজ করে। কারখানাগুলো ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মজুরি বৃদ্ধির পর থেকে সংকটে পড়ে। তাদের অনেকেই নিয়মিতভাবে বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছিল না। সেসব কারখানার একটি অংশই বন্ধ হয়েছে। আবার কিছু কারখানা করোনায় ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হওয়ায় বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিকেএমইএর সদস্য ৭১টি পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়ার বিষয়ে সংগঠনটির প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, '৭১টি কারখানার মধ্যে প্রায় অর্ধেক স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি কারখানাগুলো ক্রয়াদেশ না থাকায় সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।'