সময়টা যেন মুকেশ আম্বানির, সহজে সংগ্রহ হাজার কোটি ডলার

ভারতের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকেশ আম্বানি। এএফপি ফাইল ছবি।
ভারতের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকেশ আম্বানি। এএফপি ফাইল ছবি।

করোনাকালটা কী তাহলে শীর্ষ ধনীদের জন্যই পোয়াবারো হয়ে এসেছে? কারণ বিশ্বজুড়ে যখন লকডাউন বা অবরুদ্ধ অবস্থা চলছে এবং ব্যবসায়–বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতির চাকা বলতে গেলে থেমেই গেছে। তখনই কিনা শীর্ষ ধনীদের ধনসম্পদ বাড়ছে তো বাড়ছেই। গত দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ৬২৩ জন ধনীর মধ্যে ৬০০ জনেরই সম্পদের মূল্য বেড়েছে। তেমনি বিশ্বের ২১তম এবং এশিয়া মহাদেশ ও ভারতের এক নম্বর ধনী মুকেশ আম্বানি তাঁর ব্যবসায়িক তেলেসমাতিতে বড় এক চমক দেখিয়েছেন। এটি যেই–সেই চমক নয়, মাত্র এক মাসে হাজার কোটি ডলারেরও বেশি পুঁজি সংগ্রহের চমক।

ভারতের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকেশ আম্বানি তাঁর মোবাইল ইন্টারনেট কোম্পানি জিওর জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ও বহুপক্ষীয় বিকল্প সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি কেকেআরের (কোহলবার্গ ক্রাভিস রবার্টস) সঙ্গে চুক্তি করেছেন। এই চুক্তির মাধ্যমে কেকেআর ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার বা ১১ হাজার ৩৭০ কোটি ভারতীয় রুপির বিনিময়ে রিলায়েন্স জিওর ২ দশমিক ৩ শতাংশ শেয়ার কিনে নিল, বদৌলতে এক মাসের মধ্যে জিওতে পুঁজি বিনিয়োগ করা পঞ্চম কোম্পানি হিসেবে আবির্ভূত হলো কেকেআর। এটি হচ্ছে এশিয়ায় কেকেআরের বৃহত্তম বিনিয়োগ। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে নতুন চুক্তির তথ্য প্রকাশ করেছে।
এ নিয়ে গত এক মাসে জিও মোবাইলের ১৭ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে ১ হাজার ৩০ কোটি ডলারের পুঁজি সংগ্রহ করল রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ।
এদিকে গত শুক্রবার মুকেশ আম্বানির মোট ধনসম্পদের মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। বিলিয়নারদের তালিকা তৈরির জন্য সবচেয়ে সুখ্যাত প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস–এর বিবেচনায় মুকেশ আম্বানি টানা ১২ বার ভারতের শীর্ষ ধনী হয়েছেন। প্রসঙ্গত, ১০০ কোটিতে এক বিলিয়ন হয়, যাঁদের সম্পদমূল্য এই পরিমাণ বা আরও বেশি হয়, তাঁদের বিলিয়নার বলা হয়।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রেরই বৈশ্বিক সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি ফেসবুকের কাছে জিওর ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ার ৫৭০ কোটি ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের আরও তিনটি বেসরকারি ইকুইটি বা পুঁজি বিনিয়োগকারী ও ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের কাছে জিওর শেয়ার বিক্রি করেন মুকেশ আম্বানি। এর মধ্যে সিলভার লেক পার্টনারস ৭৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারে জিওর ১ শতাংশ, ভিস্তা ইকুইটি পার্টনারস ১৫০ কোটি ডলারে ২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং জেনারেল আটলান্টিক ৮৭ কোটি ডলারে ১ দশমিক ৩ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়।
জিওর বর্তমান গ্রাহকসংখ্যা ৩৮ কোটি ৮০ লাখ। এ ছাড়া জিওর আরেক সেবা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন প্রায় ৪০ কোটি মানুষ। হোয়াটসঅ্যাপ ইতিমধ্যে পেমেন্ট সেবা চালুর অনুমতি পেয়ে গেছে।
মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ বর্তমানে ভারতের চরম ঋণগ্রস্ত একটি প্রতিষ্ঠান, আর জিও হলো তাঁর ব্যবসায়ের চলনশক্তি। রিলায়েন্সের ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি জিওকে বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যেই আম্বানি পুঁজি সংগ্রহে নেমেছেন। রিলায়েন্সের মোট ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৪৪০ কোটি ডলার। আম্বানি জানিয়েছেন, ২০২১ সালের মধ্যে তিনি সব ঋণ পরিশোধ করে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মুকেশ আম্বানি এখন বাস করেন বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি বাড়িতে, যেটির নাম অ্যান্টিলিয়া। ভারতের মুম্বাই শহরের আলটামাউন্ট রোডে অবস্থিত এই বাড়ির দাম ২০০ কোটি ডলার, যা ভারতের ১৪ হাজার কোটি রুপির সমান। এই বাড়ির চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল আর একটি বাড়িই আছে দুনিয়াতে, সেটি হলো ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রধান প্রশাসনিক দপ্তর বাকিংহাম প্যালেস।
মুকেশ আম্বানি কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করেন। এসব গাড়ির মধ্যে আছে দুটি বেন্টলি বেন্টাগা মার্সিডিজ মেব্যাচ, অ্যাস্টমার্টিন রেপিড, রোলসরয়েস ফ্যান্টম, ল্যান্ডরোভার ডিসকভারি, ল্যান্ডরোভার রেঞ্জ রোভার, এনডেভার, বিএমডব্লিউ ইত্যাদি। এর মধ্যে বেন্টলি বেন্টাগার দাম ৭ কোটি ৬০ লাখ রুপি। সূত্র: ফোর্বস।