ভারতীয় সুতায় শুল্ক আরোপ চান দেশের বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা

করোনাভাইরাসের ক্ষতি পোষাতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের ওপর শুল্ক আরোপের দাবি করেছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। তার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতীয় সুতা আমদানির ওপর অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের দাবি করেছে বাংলাদেশের বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ। তারা বলেছে, ভারতের ব্যবসায়ীরা ডাম্পিং মূল্যে সুতা রপ্তানি করায় বাংলাদেশের মিলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী গতকাল শনিবার ভারতীয় সুতার ওপর অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে চিঠি দেন। একই সঙ্গে সুতা আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি কাউন্ট সুতার ক্ষেত্রে ট্যারিফ ভ্যালু ধার্য, আমদানি করা সুতার শুল্কায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সুতার আমদানি মূল্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে খালাসের ব্যবস্থা এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত বস্ত্র খাতের নগদ সহায়তা ৪ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।

করোনার ক্ষতি পোষাতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের ওপর শুল্ক আরোপের দাবি করে গত ২২ মে ভারতের বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে চিঠি দেন ভারতের দ্য ক্লদিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (সিএমএআই) সভাপতি রাকেশ বিয়ানি। আগামী ১২ মাসের জন্য শুল্ক আরোপ চায় ভারতের পোশাক উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনটি।

সিএমএআই সভাপতি রাকেশ বিয়ানি চিঠিতে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ থেকে শুল্কমুক্ত পোশাক আমদানির মাধ্যমে পেছন দরজা দিয়ে চীনের কাপড় ভারতে চলে আসছে। তাতে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানানির্ভর দেশীয় পোশাক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। করোনায় ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে পোশাকের চাহিদা ৪০ শতাংশের বেশি কমেছে বলেও দাবি করে সিএমএআই।

বাংলাদেশ থেকে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছর ভারতে ৩৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা কিনা দেশটির মোট পোশাক আমদানির ৩৩ শতাংশ। বিষয়টি সিএমএআই সভাপতি তাঁর চিঠিতে বেশ গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করেন। গত অর্থবছরই ভারতে পোশাক রপ্তানির বিপরীতে বাংলাদেশ ১০ গুণ বেশি পরিমাণ অর্থমূল্যের সুতা, তুলা, কাপড় ইত্যাদি সামগ্রী আমদানি করেছে বলে দাবি করেছে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী।
অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বিটিএমএর সভাপতি বলেছেন, বাংলাদেশ গত অর্থবছর ভারত থেকে ৩৯৪ কোটি ডলারের তুলা, সুতা, সুতি কাপড়সহ বস্ত্র খাতের বিভিন্ন সামগ্রী আমদানি করেছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যের অনুপাত নেতিবাচক। তারপরও তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপের প্রস্তাব অন্যায্য ও অগ্রহণযোগ্য।

মোহাম্মদ আরও আলী বলেছেন, 'ভারতীয় স্পিনিং মিলগুলি মজুত সুতা বিক্রি করতে ডাম্পিং মূল্যে বাংলাদেশে রপ্তানি করছে। আমাদের জানা মতে, ভারতীয় ৪০ কাউন্টের কম্বড সুতা বর্তমানে যে মূল্যে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের দিচ্ছে তা বর্তমান তুলার মূল্যসহ উৎপাদনের অন্যান্য অনুসর্গ বিবেচনায় নিলে কখনই সম্ভব হবে না। এতে আমাদের বস্ত্রকলগুলো অসম মূল্য প্রতিযোগীতার সম্মুখীন হচ্ছে। মিলগুলোতে সুতার মজুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।'

বিটিএমএ সভাপতি চিঠিতে আরও লিখেছেন, বর্তমান সংকট থেকে বস্ত্র খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য একটি পরিকল্পিত টেকসই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিকল্প নগদ সহায়তা হার বৃদ্ধি, সুতার আমদানির ওপর অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপ, সুতা আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি কাউন্ট সুতায় ট্যারিফ ভ্যালু ধার্যসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

উৎপাদনকারী দেশ যখন স্বাভাবিক দামের চেয়ে কম দামে অন্য দেশে পণ্য রপ্তানি করে, তখন সেটাকে বলা হয় ডাম্পিং। তখন আমদানিকারক দেশ ওই পণ্যের ওপর অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে। এ জন্য দেশটিকে নিজস্ব শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রমাণ দেখাতে হয়।