কেমন হবে ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্র

করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন বা অবরুদ্ধ অবস্থা শুরু হওয়ার আগে চাকরিজীবী মানুষেরা দিনে এক-তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি সময় অফিসে কাটাতেন। লকডাউন শুরুর পরে তাঁদের অর্ধেকের বেশি বাসায় থেকেই অফিস করছেন। কাজ করার নতুন এই ধারা ভবিষ্যতেও বজায় থাকতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। তাঁদের মতে, মানুষ কাজ করবে বাসায় বসে, আর অফিস হয়ে যাবে কথার কথা। আবার আরেক দল বলছে, ভবিষ্যতের অফিসও হবে অতীতের মতো। অফিসে গিয়ে কাজ করার সংস্কৃতি না থাকলে নানামুখী চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে।

যুক্তরাজ্যের বহুজাতিক বিনিয়োগ ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বার্কলেসের প্রধান বলেছেন, এক ভবনে সাত হাজার কর্মী নিয়ে কাজ করার ধারণাটা অতীত হয়ে যেতে পারে। আবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একই ধরনের কোম্পানি মরগ্যান স্ট্যানলির প্রধান বলেছেন, সামনের দিনে কাজ করতে অনেক কম জায়গার প্রয়োজন হবে।

ব্যবসায়ী মার্টিন সোরেল জানিয়েছেন, আগে যে রকম সাড়ে তিন কোটি পাউন্ড খরচ করে একটি ব্যয়বহুল অফিস গড়ে তুলেছিলেন, তেমনটা আর করবেন না।

দ্য জয় অব ওয়ার্ক গ্রন্থের লেখক ব্রুস ডেইসলি বলেন, ‘আমরা বুঝে ফেলেছি অফিস রাখার দিন ফুরিয়েছে। এতকাল যেভাবে অফিস করা হতো, এখন তা সম্ভবত অতীত হয়ে যাবে।’

তবে অফিস একেবারেই থাকবে না, সেটি এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না বলে অভিমত লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটির বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক আন্দ্রে স্পাইসারের। তাঁর পূর্বাভাস হচ্ছে, অফিসের কার্যক্রমে কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটবে। তাঁর পরামর্শ হলো, অফিস হবে কেন্দ্র, যেখানে জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপকদের যেতে হবে। তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে কর্মীরা সপ্তাহে দু–এক দিন অফিসে যেতে পারেন।

সোশ্যাল মিডিয়া টুইটার চায় তার কর্মীরা চিরদিনই বাসায় থেকে কাজ করুক। তবে একই সঙ্গে তারা অফিসও খোলা রাখার পক্ষে, যাতে কর্মীরা চাইলে আসতে পারেন। বাড়িতে বসে কাজ করে অনেকেই সুখী হতে পারেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, অফিস না থাকলে নিজেকে নিঃসঙ্গ ও নির্বাসিত মনে হবে। কারণ, মানুষ সামাজিক জীব, তাই ঘরে বসে কাজ করা কঠিন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট (এসএইচআরএম) বলেছে, কাজের ক্ষেত্র ও পরিবেশ চিরকাল একরকম থাকবে না। কাজকর্ম ও ব্যবসা–বাণিজ্য আগের মতো করে চলবে না, এটা প্রায় নিশ্চিত।

এসএইচআরএমের গবেষণায় দেখা গেছে, ৭১ শতাংশ নিয়োগদাতা বলেছেন, কর্মীরা বাড়িতে থেকে কাজ করলে কাজের সমন্বয় করতে অসুবিধা হয়। ৬৫ শতাংশ নিয়োগদাতার মতে, কর্মীদের মনোবল চাঙা রাখাটাও একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক–তৃতীয়াংশের বেশি নিয়োগদাতা মনে করেন, বর্তমান অবস্থায় কোম্পানির সংস্কৃতি বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।

আবার, অক্সফোর্ড ইকোনমিকস ও এসএইচআরএমের আরেক গবেষণায় উঠে এসেছে, ৬৪ শতাংশ কর্মী বাসায় থেকে কাজ করছেন। এতে বলা হয়, বাসায় বা দূরদূরান্তে থেকে কাজ করাটা একটি বিকল্প হিসেবে ব্যাপক স্বীকৃতি পাচ্ছে।

অনেককাল ধরেই মানুষ অল্প জায়গায় বিস্তর লোক গাদাগাদি করে অফিস করেছেন। করোনার কারণে এখন খোলামেলা জায়গা রেখে কর্মীদের জন্য উৎপাদনশীল ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি এবং কর্মীদের করোনা পরীক্ষা, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা—এ ধরনের নানা বিষয় সামনে চলে এসেছে।

এদিকে অফিস ও কাজের ধরন বদলে যাওয়ার সম্ভাবনাকে সামনে রেখে ভাবতে শুরু করেছেন স্থপতি ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নকশা ও স্থাপত্যবিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান জেন্সলারের অধ্যক্ষ পগ ম্যাকলরিন বলেন, প্রথমত ও প্রধানত কর্মীদের নিরাপদ রাখতে হবে। তাঁর প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে অফিসে সুপরিসর করিডর, একমুখী চলাচল, প্রাকৃতিক আলো–বাতাস, স্পর্শ ছাড়াই চলে এমন লিফট স্থাপন, সম্মেলনকক্ষ এড়িয়ে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন এবং অণুজীব প্রতিরোধক উপাদান দিয়ে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার ওপর জোর দিতে শুরু করেছে। সূত্র: বিবিসি, সিএনএন