ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দুই থেকে আড়াই বছর সময় লাগবে

>
সেলিম এইচ রহমান,  চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, হাতিল
সেলিম এইচ রহমান, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, হাতিল
আসবাব খাতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির চেয়ারম্যান ও হাতিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম এইচ রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকার

প্রথম আলো: করোনার কারণে দেশের আসবাব খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে?

সেলিম এইচ রহমান: মারণঘাতী ভাইরাসটির কারণে তিন মাস ধরে ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। এর মধ্যে বৈশাখ ও পবিত্র ঈদুল ফিতর থাকায় বড় লোকসান হয়েছে প্রত্যেক ব্যবসায়ীর। কারণ, সারা বছরের মধ্যে এই দুটি উৎসবে আসবাবের বেচাবিক্রি বেশি হয়। ঈদের আগে ১৫ দিন সীমিত পরিসরে দোকানপাট খুলতে পারায় অল্প কিছু বিক্রি হলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই বিক্রয়কেন্দ্র ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে। অনেকেই পুঁজির সংকটে পড়ে গেছে। আবার অনেকেই তো দোকান ভাড়াই দিতে পারেনি।

প্রথম আলো: করোনাকালে অনলাইন ব্যবসা কি বেড়েছে?

সেলিম এইচ রহমান: হ্যাঁ, অনলাইনে ব্যবসা বেড়েছে। আসবাব যে অনলাইনে বিক্রি হতে পারে, সেটি অনেকেরই ধারণা ছিল না। করোনার কারণে অনলাইন বিক্রির নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি ব্র্যান্ড ছাড়া অধিকাংশেরই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নেই। ফলে সব ব্যবসায়ী সুযোগটি নিতে পারেননি। অবশ্য অনলাইনে বিক্রি হলেও সেটি আহামরি কিছু নয়। কারণ, আসবাব অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরই মানুষ আসবাব কিনে থাকে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আসবাবের বিক্রি বাড়বে না।

প্রথম আলো: অর্থের হিসাবে করোনার কারণে আসবাব খাতের ক্ষতির পরিমাণ কেমন?

সেলিম এইচ রহমান: আমাদের ধারণা, করোনায় গত দুই মাসে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দুই থেকে আড়াই বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

প্রথম আলো: করোনায় রপ্তানি বাজারে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে? নতুন কোনো সম্ভাবনা কি দেখছেন?

সেলিম এইচ রহমান: আমরা সাধারণত ভারত, নেপাল ও ভুটানে আসবাব রপ্তানি করি। করোনার কারণে সেসব দেশেও অবরুদ্ধ বা লকডাউন অবস্থা চলছে। দোকানপাট বন্ধ থাকায় বিদেশের ক্রেতারা গত দুই মাসে নতুন কোনো ক্রয়াদেশ দেয়নি। ফলে আসবাব রপ্তানি পুরোপুরি থমকে গেছে। আশা করছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় আসবাব রপ্তানি শুরু হবে। করোনাসহ নানা কারণে চীনের ওপর বিমুখ হচ্ছেন ক্রেতারা। ফলে আমাদের জন্য নতুন একটি সম্ভাবনা আসলেও আসতে পারে।

প্রথম আলো: করোনা মোকাবিলায় সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। আপনারা কি সেখান থেকে ব্যাংক ঋণ নিতে পারছেন?

সেলিম এইচ রহমান: প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ পেলে আসবাব খাতের ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। তবে ব্যাংকগুলো এখনো ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেনি। হয়তো শিগগিরই প্রক্রিয়া শুরু হবে। অবশ্য আমাদের দুশ্চিন্তা হলো, বড় ব্যবসায়ীরা ঋণ পেলেও ছোটরা পাবে কি না। এখন পর্যন্ত ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাননি। অথচ তাঁদের সংখ্যাই বেশি এবং তাঁদেরই ব্যাংকঋণ বেশি প্রয়োজন।

প্রথম আলো: বাজেট আসছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আসবাব খাতের জন্য কী ধরনের নীতিসহায়তা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?

সেলিম এইচ রহমান: করোনার কারণে দেশ-বিদেশের বাজার উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আসবাবের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিপুল পরিমাণ শুল্ক দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সেই জায়গায় যদি কিছু ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে রপ্তানি বাজারে সুবিধা পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে দেশের বাজারেও পণ্যের দাম কমানোর সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা। তাতে করোনায় ক্রয়ক্ষমতা কমলেও সাধারণ মানুষ কিছুটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচবেন। হয়তো আসবাব খাত দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।