মূল কাজে হাত দেওয়া জরুরি

এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।
এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।

মোট আয়, ব্যয় ও অর্থায়নই হচ্ছে বাজেটের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা। রাজস্ব আয়ের সঙ্গে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারের একটা সম্পর্ক থাকে। দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই, গোটা বিশ্বেই জিডিপির তুলনায় এখানে রাজস্ব আয়ের হার নিম্নতম। একদিকে মধ্যম আয়ের দেশের দিকে আমাদের অভিযাত্রা, অন্যদিকে রাজস্ব-জিডিপির এই নিম্নতম হার আমরা বজায় রাখছি। এটা আর মানা যায় না। সুতরাং জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেওয়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা—দুটিই অবাস্তব লাগছে।

রাজস্ব আদায় কম হলে ব্যয় কমাতে হবে। সব ব্যয় তো আর কমানো সম্ভব নয়। ফলে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় না কমালে বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাবে। যে ঘাটতি পূরণে সরকারকে অতিমাত্রায় ঋণ নিতে হবে। তবে এটা ঠিক, কোভিডের কারণে অনেক উন্নত দেশেও রাজস্ব আহরণের মাত্রায় টান পড়েছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের বাজেট ঘাটতি জিডিপির অন্তত ৬ শতাংশ হতেই পারে।

নতুন অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস কোভিডের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সব ধরনের অসুবিধার পাশাপাশি মোটাদাগে বড় দুটি সমস্যা হচ্ছে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমার নেতিবাচক চিত্র। আমাদের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলো নিজেরাই বিপদে এখন।

অর্থায়নের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংককে বেশি মাত্রায় বেছে নেওয়া ঠিক হবে না। এ ব্যাংকগুলো এমনিতেই বিপদে আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও ঋণ নিতে পারে সরকার। সহজ কথায় বললে টাকা ছাপানো। অনেকে এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বলেন। এখন তা বাড়বে না। কারণ, মানুষের তো চাহিদাই কম এখন।

ভালো খবর যে বৈদেশিক ঋণ পাওয়া যাচ্ছে। আরও দর-কষাকষি করতে হবে। সহজ শর্তের ঋণের পাশাপাশি অনুদানের জন্যও দৌড়ঝাঁপ করতে হবে। কিন্তু এগুলো সব সাময়িক পদক্ষেপ। মূল কাজে হাত দেওয়া জরুরি। সেটা হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার রাজস্ব সংগ্রহের কাজে মনোযোগী নয়। সুযোগ আছে আয় বৃদ্ধির কিন্তু সরকার তা কাজে লাগাচ্ছে না। প্রচুর কর ফাঁকি হয়। সরকার তা ধরছে না। উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কর আদায়যোগ্য কত লোক আছে! সরকার তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। সরকার হয়তো মনে করছে এতে জনপ্রিয়তা কমে যাবে। কিন্তু রাজস্ব সংগ্রহে মনোযোগী হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। বিষয়টি সরকার যত তাড়াতাড়ি বুঝবে, তত সরকারের জন্যই ভালো হবে, জনগণের জন্যও ভালো হবে।