করোনা এত দিনে কী প্রভাব ফেলল

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গত বছরের শেষ দিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে উৎপত্তি। এই মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশে। প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ আর মৃত্যু। এর মধ্যে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। এই জুনে এসে খতিয়ে দেখা যাক, আমাদের জীবনে করোনা কী প্রভাব ফেলেছে। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের কোভিড অ্যাকশন প্ল্যাটফর্মে জুন পর্যন্ত সারা বিশ্বের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।

বিশ্বে কোভিডের প্রভাব
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, ১ জুনে এসে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা পৌঁছেছে ৬১ লাখে। ৩ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। সুস্থ হয়েছে ২৬ লাখ মানুষ।

এই ভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব যে কতটা তীব্র, তা বোঝা যায় জেনেভায় বিনা মূল্যের খাবার নেওয়ার লম্বা সারি দেখলে। বিশ্বের অন্যতম ধনী শহর সুইজারল্যান্ডের জেনেভা। অথচ সেখানেই বিনা মূল্যের খাবার দিতে মানুষের সারি মাইল ছাড়িয়েছে। করোনার কারণে অর্থনৈতিক অবকাঠামো ভেঙে পড়াতেই এই হাল।

যুক্তরাজ্যে লকডাউন শিথিল করে কার্যক্রম পুনরায় চালু করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জুনে এসে গত তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম সংক্রমিত হয়েছে স্পেনে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সংক্রমণের সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়েছে। অর্থনৈতিক সূচক থেকে বোঝা যাচ্ছে, কঠিন সময় আসছে এশিয়ার কারখানাগুলোর জন্য।

অর্থনীতির চেয়ে মানুষ বড়: পোপ
ক্যাথলিক খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, অর্থনীতির চেয়ে মানুষের জীবন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা ভেবে লকডাউন শিথিল করতে যাচ্ছে—এর পরিপ্রেক্ষিতেই এই মন্তব্য করেন পোপ। গত কয়েক মাসের মধ্যে এই প্রথম মন্তব্য করেছেন তিনি। পোপ বলেন, ‘অর্থনীতিকে সহযোগিতার জন্য অর্থ সঞ্চয় নয়, মানুষকে সুস্থ করে তোলা গুরুত্বপূর্ণ।’

যুক্তরাজ্যের লকডাউন শিথিল ঠিক কি না
১০ সপ্তাহ পর চালু হয়েছে যুক্তরাজ্যের কিছু স্কুল। তবে অনেক অভিভাবকই বাচ্চাদের স্কুলে দেবেন না। তাঁরা মনে করছেন, সরকার বেশি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনাভাইরাসে যুক্তরাজ্যে বহু মানুষ মারা গেছেন। তাই শঙ্কিত মানুষ মনে করছেন, এটা খুব বেশি তাড়াহুড়া হয়ে গেল। অনেক বিজ্ঞানীও বলছেন, এর ফলে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়েছে যুক্তরাজ্য।

জনশ্রুতির কারণে শক্তিশালী হচ্ছে মিথ্যা বিশ্বাস
করোনাভাইরাসের কারণে সত্যির চেয়ে ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রতি ঝুঁকছে মানুষ। কনভারসেশনের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। কোনো প্রাচীন মিথের বিষয়ে সত্যটা কী, এর চেয়ে মিথটা ধরেই বসে থাকে মানুষ। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, যেমন মানুষ যদি মিথ বনাম ফ্যাক্ট এমন আর্টিকেল পড়েন, প্রথমে মিথ ও সত্য দুটোই পড়েন। তবে কিছুদিন পর সত্যটা ভুলে গিয়ে কেবল মিথের চর্চা করে। করোনাভাইরাসের সংবাদের ক্ষেত্রেও তা–ই হচ্ছে।

অসুস্থতার ছুটি কি করোনার বিস্তার কমাতে পারে
হেলথ ইকোনোমিকসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পারিশ্রমিকসহ অসুস্থতার ছুটি করোনার বিস্তারকে ধীর করে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, অসুস্থতার জন্য ছুটিতে থাকার সময় পারিশ্রমিক প্রদান করলে সংক্রমণ ও রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি কমে। কারণ, মানুষ বাসায়ই থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফ্যামিলি ফার্স্ট করোনাভাইরাস রেসপন্স অ্যাক্টের’ মতো ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে বহু নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। মে মাসে নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ওই আইনের ফলে বিনা মূল্য করোনা পরীক্ষার সুবিধার পাশাপাশি আক্রান্ত ও তাদের পরিচর্যায় থাকা ব্যক্তিরা বেতনসহ ছুটি পাবেন।